বুয়েটের মতো ঢাবিতেও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া দরকার

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর ১১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী পদ পাওয়ায় আবারও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাত্রদের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা জানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুয়েটের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ফেরিফাইড পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এ কথা জানান।

অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, "বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না, আবার প্রজ্ঞাপন" বুয়েটের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে, বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব-সোসাইটি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা এর অঙ্গসংগঠনের অথবা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হতে বা তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং এগুলো অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তার মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এটাই দরকার। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শান্তির সুবাতাস বইবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা আসার সুযোগ তৈরি হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের নানা রকম টর্চার থেকে বাঁচানো যাবে। ছাত্রদের দাবি মেটানোর জন্য মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে ক্লাস রেপ্রেজেন্টেটিভ, বিভাগ রেপ্রেজেন্টেটিভ, অনুষদ রেপ্রেজেন্টেটিভ, বিশ্ববিদ্যালয় রেপ্রেজেন্টেটিভ ইত্যাদি তৈরি করা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোয়ালিটি লিডারশিপ গড়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে। বর্তমান রাজনীতির নামে কুরাজনীতির মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সিট দখল, ছিনতাই, মারামারি ইত্যাদি অপকর্ম শেখার সাথে সাথে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোন দলকে ক্ষমতায় নিতে আবার কোন দলকে ক্ষমতায় রাখার কাজে ব্যবহার করছি। এর ফলে দেশে মেধা বিকাশের পথ রুদ্ধ হচ্ছে।

আমি অনেক বাবা মাকে বলতে শুনি তারা তাদের সন্তানদের Bangladesh University of Professionals (BUP) কিংবা Islamic University of Technology (IUT) তে পড়াতে চায় কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চাননা। BUP তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে কেন ছাত্র রাজনীতি নাই? শুধু BUP না Military Institute of Science and Technology (MIST)ও সরকারি, সেটিতেও কোন রাজনীতি নাই।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ের রাজনীতি চলে আমার বোধে আসে না। আইডিওলজি ভিত্তিক রাজনীতি চলতে পারে যদি সেটা কেবল ছাত্র সংক্রান্ত হয়। কাউকে ক্ষমতায় নিতে বা নামাতে ছাত্ররা রাজনীতি করতে পারে না। এতে তাদের মধ্যে লোভ ঢুকে যায়, পরিবেশ নষ্ট হয় যার জ্বলন্ত উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

নোংরা ক্ষমতা কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হলে শিক্ষকদেরকেও ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এইটুকু যদি করতে পারি দেশের উচ্চ শিক্ষার মান রাতারাতি বদলে যাবে। বুয়েটের শিক্ষার পরিবেশ অলরেডি অনেক ভালো হতে শুরু করেছে। সেখানকার ছাত্রদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এখন আর ছাত্ররা আবাসিক হলে টর্চারের শিকার হচ্ছে না। এইটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই তো বিশাল অর্জন। ক্ষমতা কেন্দ্রিক ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করলে বর্তমান মানের শিক্ষক দিয়েই শিক্ষার মানের ম্যাজিক্যাল পরিবর্তন আনা সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ