স্মার্ট বাংলাদেশ: হিজাবের বেলায় নয় কেন?

স্মার্ট বাংলাদেশ: হিজাবের বেলায় নয় কেন?
স্মার্ট বাংলাদেশ: হিজাবের বেলায় নয় কেন?  © সংগৃহীত

বিগত ২৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সকল ধরনের পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তে মুখমণ্ডল খোলা রাখার আদেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এমন আদেশে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় পর্দার খেলাপ ও হিজাব স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) প্রতিনিধি খাদিজা জাহান তান্নি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য রোল মডেল। এমতাবস্থায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম অর্থডক্স চিন্তাভাবনায় মুসলিম নারী সমাজ ব্যথিত। আধুনিকায়নের এই যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিকতার সর্বোচ্চ প্রমাণ রাখবে এই আশা রাখাই যায়। পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য মুসলিম নারীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদের (যেখানে ধর্ম পালনে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে) লঙ্ঘন।

আমি মনে করি পরিচয় শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। মুখ খোলা রাখাই যদি পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য যথেষ্ট হতো তাহলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাজিদুল কবির তিনবছর ছাত্রত্ব ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হতো না। তাই পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবস্থা করা, নারী শিক্ষিকা বা নারী স্টাফ দ্বারা পরীক্ষার পূর্বে নির্জন-স্থানে ছাত্রী শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা উচিত।

তাবাসসুম বিনতে মো: উল্লাহ, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা ও বস্ত্র একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ধর্মীয় আঘাত হেনে সেই শিক্ষা অর্জনই যখন বাধাপ্রাপ্ত হয় ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। এদেশে খোলামেলা পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন হয় কিন্তু হিজাব -নিকাব পরার কোনো স্বাধীনতা পাওয়া যায়না। 

ভার্সিটির এক্সামসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্ষেত্রগুলাতে মুসলিম ছাত্রীদের পর্দার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আইডেন্টিটির জন্য অন্য কোনো উপায় তারা চাইলেই তৈরি করতে পারেন কিন্তু এভাবে পর্দার খেলাপ করে একজন মানুষকে হেনস্তা করে আইডেন্টিফাই করাকে আমি কখনোই সমর্থন করিনা।

মাহমুদা আফরোজ, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

শুধু ঢাবি নয়, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া খণ্ড চিত্রমাত্র। আধুনিকায়নের যুগে তথ্য-প্রযুক্তিতে যথেষ্ট সমৃদ্ধ বাংলাদেশে কেন ভেরিফিকেশনের নামে পর্দাশীল বোনদের হেনস্তার শিকার হতে হবে? ফিঙ্গারপ্রিন্ট, বায়োমেট্রিস, চোখের রেটিনাস্ক্যান সহ আরো অনেক প্রযুক্তি রয়েছে শনাক্ত করার জন্য। এছাড়াও ফিমেইল শিক্ষক- কর্মচারীদের দ্বারা ভেরিফিশন করা যায়। 

একটা ক্লাস রুমে হয়তো সর্বোচ্চ ৩-৫ জন  থাকতে পারে। তাদের খুব বেশি সময় বা শ্রমের প্রয়োজনও পড়বেনা। বিকল্প মাধ্যমগুলো বিবেচনায় না এনে কারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত? সবশেষে এটাই বলবো শনাক্ত করা নিয়ে সমস্যা হলে বিকল্পের অভাব নেই। এগুলো বিবেচনায় না এনে যদি হিজাবই হয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তবে আমি বলবো সমস্যাটা আসলে কোথায় তা খতিয়ে দেখা উচিত।

আবিদা খাতুন, শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

হাইকোর্ট থেকে ভাইবা প্রেজেন্টেশনে চেহারা শনাক্তকরণে নেকাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন শিক্ষকরা বাবার সমান। তাহলে শিক্ষকদের দ্বারা হেনস্থা ও মানহানিকর ঘটনা কেনো ঘটছে। একজন শিক্ষার্থীকে যাচাই করার জন্য তার ক্লাস, পরীক্ষা, ও ভাইবার পারফরম্যান্স দিয়ে যাচাই করা উচিত চেহারা দিয়ে নয়। বর্তমান সময়ে নারী ক্ষমতায়নের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তব্য আর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বই লিখে নারী স্বাধীনতা বা নারী অধিকার খর্ব করার নাম এই ভাইবা বোর্ড। এমন সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।

রাফিয়া খানম, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

যেহেতু বাংলাদেশ পুরোপুরি সেক্যুলার না। প্রায় ৯০ শতাংশই মুসলিম ইসলাম ধর্ম পালন করে। সেখানে হাইকোর্টের হিজাব- নিকাব নিয়ে রায় কতটুকু যৌক্তিক। এই আইন জোরপূর্বক নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া ও হেনস্থার শামিল। আমরা সবকিছুতেই পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করছি তবে মানবাধিকারের বেলায় কেন নয়! এটি হিজাব বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থীই অকালে ঝড়ে পড়বে।

মাহমুদা মাহরিন, শিক্ষার্থী, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একইসাথে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেয়া আর মুখ খোলা রাখতে বাধ্য করা- দুইটাই বিপরীতধর্মী কথা হয়ে যায়। পুরোপুরি পর্দা করে অর্থাৎ ধর্ম মেনে মুখ খোলা রাখা কখনোই সম্ভব নয়। আইডেন্টিফিকেশন এর জন্য এক্সাম হলে প্রবেশের পূর্বেই মহিলা স্টাফ দিয়ে চেক করানো যেতে পারে কিংবা ইচ্ছা করলে অনেক পদ্ধতিতেই করা যেতে পারে। যেখানে পুরুষের সামনে মুখ খোলা ব্যতিরেকেই সুন্দরভাবে আইডেন্টিফিকেশন সম্ভব। একটি ইসলাম প্রধান দেশে বেপর্দা থাকতে বাধ্য করা কখনোই কাম্য নয়।

মার্জিয়া সুলতানা, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ