মসজিদ-মাদ্রাসার নামে জমি দখল, বিচার চেয়ে মানববন্ধন-বিক্ষোভ

কর্মসূচিতে অংশ নেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা
কর্মসূচিতে অংশ নেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা  © সংগৃহীত

মসজিদ-মাদ্রাসার নামে জমি দখল, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (৬ জুলাই) রাজধানীর পূর্বাচলের হেলিপ্যাড চত্ত্বরে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, স্থানীয় জহির উদ্দিন ও তার পুত্র সালাহ উদ্দিন দীর্ঘদিন প্রতারণা, জালিয়াতি ও অবৈধভাবে জমি দখলের মাধ্যমে অনেক মানুষকে সর্বশান্ত করেছে। মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পূজি করে মসজিদ ও মাদ্রাসার সাইনবোর্ডের আড়ালে দীর্ঘদিন তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা। 

জানা গেছে, মসজিদ-মাদ্রাসার নামে জায়গা দখল করে তাতে বসতবাড়ি নির্মাণসহ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে প্রতারক পিতা-পুত্র চক্র। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউটের কাছে জায়গা বিক্রির নামে বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও জায়গা বুঝিয়ে দেয়নি অভিযুক্তরা। উল্টো নানানভাবে হুমকি ও হয়রানি করে যাচ্ছে এই চক্রটি। পাশাপাশি মাজারের জমি দখলসহ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এক জমি একাধিকবার বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে সালাহউদ্দিন ও তার পিতার বিরূদ্ধে।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া স্থানীয় লোকজন জানান, স্থায়ীয় অধিবাসী এবং ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট (এনপিআই) এর প্রতিষ্ঠাতাদের অর্থিক সহযোগিতায় তৈরি মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউট, এতিমখানা এবং মসজিদের জায়গায় জোর করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে জহির উদ্দিন এবং সালাউদ্দিন গং এর পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন। 

স্থানীয় জনগণ বিক্ষোভে আরও বলেন, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অপরাধের সম্রাজ্য বাড়িয়ে চলছে অভিযুক্তরা। এসময় তারা সালাহ উদ্দিন ও তার পিতা জহির উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী এবং ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত জহির উদ্দিন এবং জহির উদ্দিনের পূত্র মো: সালাউদ্দিন। তারা জানান, পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক একালায় জমির প্লট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় এই জালিয়াত চক্র। তারা নানা সময়ে নানান ব্যক্তিকে জমি বিক্রির নামে ঠকিয়ে আসছে। কখনও জমি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, আবার কখনও একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বায়না করাসহ নানারকমভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে চক্রটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুঃসাহসী এই প্রতারক বিভিন্ন সময় উসকানিমূলক কথা বলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে স্থানীয় কিছু লোকজনকে ব্যবহার করেছে, এমনকি মিথ্যা কথা বলে গণমাধ্যমকেও হাতিয়ার করেছে। সালাহ উদ্দিন এই ভয়ংকর প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য বলে জানান তারা।

আর এই প্রতারক চক্রের ভয়ংকর শিকার ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট-এনপিআই নামক প্রতিষ্ঠানটি। এর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সালাহ উদ্দিন পূর্বাচলের সেক্টর-২০, রোড- ৪০১/বি, ০৯, ১১, ১২, ১৪ নং প্লট বিক্রির কথা বলে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। সেই মোতাবেক বিক্রয় বাবদ টাকা গ্রহণ করে বায়না স্ট্যাম্প দলিল মূলে সালাউদ্দিন রাজউকের নকশা অনুমোদনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে প্লটের দখল বুঝিয়ে দেয়। জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি বাবদ এনপিআই থেকে ব্যাংক চেক, ব্যাংক ডিপোজিট, পে অর্ডারের মাধ্যমে এবং নগদ মোট সাত কোটি ৭৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮২০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই প্লটগুলোতে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানটি। ভবন নির্মাণসহ সর্বমোট ৯ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার আটশত ২০ টাকা ব্যয় করার পরও সালাহ উদ্দিন জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরিবর্তে ওই জমি থেকে ক্রেতাদের উৎখাত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বলেও অভিযোগ এনপিআই কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, এসব প্রতারণার অংশ হিসেবে সালাহ উদ্দিন জমি বিক্রির চুক্তিপত্রে ভুল তথ্য উপস্থাপনসহ নিজের শাশুড়ির ভুল এনআইডি কার্ড নম্বর ব্যবহার করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই প্রতারক জমি বিক্রি বাবদ টাকা গ্রহণের পর আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন বিদেশে আত্মগোপনে ছিল। পরবর্তীতে দেশে ফিরে এনপিআই কর্তৃপক্ষকে নিজেদের কেনা জায়গার দখল ছেড়ে দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে।

এনপিআই কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সালাহ উদ্দিন পূর্বাচল প্রকল্পের তার মালিকানার ১০২ শতাংশ জমি নগদ তিন কোটি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে সাবকাবলা দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। কিন্তু এর আগে উক্ত জমি তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নিকট ১০ কোটি টাকা মূল্যের রেজিস্ট্রি বায়নাও নেয় এই প্রতারক। এমন অবস্থায় প্রতারণার শিকার তরিকুল ইসলাম সালাহ উদ্দিনের নামে প্রতারণার মামলা করেছে। এছাড়াও নানান অপকর্মে থানায় লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা।


সর্বশেষ সংবাদ