যে কারণে মেধা পাচার বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে

বাংলাদেশ দেশে বিপুলে সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে
বাংলাদেশ দেশে বিপুলে সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে  © প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবনতা ক্রমেই বাড়ছে। বৃত্তিসহ লোভনীয় সব সুবিধার কারণে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা। সিংহভাগ শিক্ষার্থীর গন্তব্য উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া। এটিকে মেধা পাচার উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এসব দেশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও লোভনীয় অন্যান্য সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বড় অংশই পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরে না। এর মধ্যেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন অনেক। অভিবাসী হওয়া দেশগুলোয় চাকরি, বসবাসের সুযোগ ও জীবনযাত্রার উচ্চ মানের কারণে  দেশে ফেরেন না তারা।

এ ছাড়া অনেক দেশের জন্মহার কমে যাওয়ায় কমছে জনসংখ্যাও। এ কারণে শিক্ষা অভিবাসনের মাধ্যমে শ্রমঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে পশ্চিমাদেশগুলো। বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণে তরুণরা এ সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছেন।

২০২১ ওপেন ডোর রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আট হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশিকে স্টাডি পারমিট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ২০০৯ সালের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি। এফএসিডি-ক্যাব বলছে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বৃত্তি পাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

সফল অভিবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালেও ‘ব্রেইন ড্রেন’ বা মেধা পাচার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর ফলে প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে। মেধাবীদের দেশত্যাগের কারণে অর্থনীতিতে আস্থা নষ্ট হতে পারে। শিক্ষায় দেশের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবাও সমস্যায় পড়বে।

ইউনেসকোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রায় ২৪ হাজার ১১২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে যায়। ২০২০ সালে এ সংখ্যা চারগুণ হয়েছে। প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতি ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশে চলে যায়। তাদের খুব কমই ফিরে আসে দেশে।

এদিকে ইউজিসির তথ্য বলছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষক ২০২০ সালে অবৈধভাবে দেশের বাইরে ছিলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন পেয়েছেন ছয় বছর। তারা বিনা বেতনে বিদেশে থাকার অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেননি। ২০২০ সালে বিনাবেতনে বিদেশে ছিলেন ১০৩ জন শিক্ষক।

অনুমতি ছাড়া বিদেশে থাকায় ২০১৬ সালে ৫২ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই অভিযোগে ১৯৭২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৮০ জন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বুয়েটের ১১৮ জন শিক্ষক বিদেশে গেলেও ফিরেছেন ৩৮ জন।

আরো পড়ুন: স্নাতকোত্তরে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ দিচ্ছে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিল আফরোজা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও সুযোগ-সুবিধায় খুশি না হতে পেরে দেশ ছেড়েছে। দেশের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা থাকায় মাঝারি মেধার শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হচ্ছে বিদেশ যেতে। কারণ পড়া শেষে বিদেশে সহজে চাকরি পাওয়া যায়।’

শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়া ঠেকানোর উপায় হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ কম থাকায় অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্ন তো আছেই। মেধাবীদের ধরে রাখার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা উচিৎ সরকারের। দেশে অদক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষার অভাবে।


সর্বশেষ সংবাদ