বিএনপি নেতা হারিছ মারা গেলেন মাহমুদুর রহমান নামে

বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী
বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী  © সংগৃহীত

বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। রয়েছে নানা বিতর্ক। সম্প্রতি মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে চাঞ্চ্যলকর তথ্য। দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশেই ছিলেন বিএনপির এই নেতা। নতুন নাম মাহমুদুর রহমান ধারণ করেই পান্থপথে কাটিয়েছেন জীবনের বাকিটা সময়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সাড়ে তিন মাস পর মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। গোপনে দাফন করা হয় সাভারে। হারিছ চৌধুরীর পরিবার সূত্র এসব তথ্য জানায়।

বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা ছিলো। কয়েকটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন।

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী বলেন, তার বাবা হারিছ চৌধুরী গত বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন। যদিও তার চাচা আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, হারিছ ঢাকায় নয়, লন্ডনে মারা গেছেন। এই খবর প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উড়িয়ে দেন। দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন গোয়েন্দারা।

পত্রিকাটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৪ বছর দেশেই ছিলেন। নিজেকে মাহমুদুর রহমান হিসেবে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। পান্থপথের বাসায় কাজের বুয়া ও একটি ছেলেসহ থাকতেন। হারিছ নিজেকে অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন। বাসার আশেপাশের লোকজনও তাই বিশ্বাস করতো। লম্বা সাদা দাঁড়ি ও পাকা চুলে হারিছ চৌধুরীকে চিনতে পারেন নি কেউ। পরিবারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হতো খুব কম। মাঝেমাঝে ছেলের সঙ্গে কথা হতো।

আরও পড়ুন- বিতর্কের মুখেই চবিতে নিয়োগ পেলেন ২৪ শিক্ষক 

নতুন নাম ধারণের পর ওই নামেই জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানান তিনি। পাসপোর্ট নম্বর BW0952982। এতে ঠিকানা দেন শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। বাবার নাম আবদুল হাফিজ। ২০১৮ সনের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়। পাসপোর্টে দেয়া ছবিতে দেখা যায় এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাদা লম্বা দাড়ি। চুলের রঙ একদম সাদা। বয়সের ছাপ পড়েছে।তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ছিলো ১৯৫৮৩৩৯৫০৭।

ঢাকার পান্থপথে একটি ভাড়া করা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকতেন হারিছ চৌধুরী। বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। বই পড়ে সময় কাটাতেন। নামাজ আদায় করতেন নিয়মিত। নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আমি তিন বছর ধরে এখানে কাজ করি। তার সম্পর্কে  ব্যক্তিগত তথ্য খুব একটা জানতাম না। শুনেছি তার স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন লন্ডনে। কেউ কোন দিন আসেনি। আসা যাওয়ার সময় সালাম দিতাম। তিনি হাসি মুখে সালাম নিতেন। তাকে সবাই প্রফেসর সাহেব বলেই জানতো। নিঃসঙ্গ এই মানুষটির মৃত্যুও হয় নিঃসঙ্গতায়।

সাইফুল জানান, একদিন ভোর রাতে কেউ একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুনেছি হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার মেয়েকে দেখি। প্রথমে আমাদেরকে জানাতেও চাননি স্যার মারা গেছেন। মারা যাবার পর দুই মাস এই বাড়িতেই ছিলেন জামাইসহ। গত জানুয়ারিতে তারা বাসা ছেড়ে দেন। হারিছ চৌধুরী খুব একটা বের হতেন না। কথাও বলতেন না। এই বাসার সামনের একটি ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতেন। সেই ফার্মেসী সূত্রে জানা যায়, তিনি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিক ও হৃদরোগের ওষুধ কিনতেন। ফার্মেসীর মালিক সুমন খন্দকার বলেন, স্যার খুব ভাল মানুষ ছিলেন। কখনো বাকিতে ওষুধ নিতেন না। পাশেই একটি মুদি দোকান। এই দোকান থেকেই জিনিষপত্র কিনতেন। দোকানের মালিক মোহাম্মদ সুজন বলেন, তিনি তো খুব ভাল মানুষ ছিলেন। সব সময় আমার দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল এসব প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেন। ফ্ল্যাট মালিক জানান, তার মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই জানেন না। প্রফেসর সাহেব নিয়মিত ভাড়া দিতেন। ভাল মানুষ ছিলেন।

আরও পড়ুন- শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে চাই

গত বছরের ২৬ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ৩ সেপ্টেম্বর। তার মৃতদেহ গ্রহণ করেন মেয়ে সামিরা চৌধুরী। তিনি জানান, প্রথমে কেউই করোনা আক্রান্ত রোগীর লাশ গোসল করাতে রাজি হয়নি। পরে যাই হোক রাজি হওয়ার পর গোসল সম্পন্ন হয়। তিনি জানান দাফন নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। কোথায় দাফন হবে। এরপর আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে সাভারে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের লালাবাদ কমলাপুরে। জামিয়ার কর্ণধার শাইখুল হাদিস আশিকুর রহমান কাশেমী সাহেব সম্মত হন। এরপর তাকে জামিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই দাফন করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence