লঞ্চে আগুন

সুগন্ধার বাতাসে লাশ পোড়া গন্ধ, তীরে স্বজনদের আর্তনাদ

তীরে স্বজনদের আর্তনাদ
তীরে স্বজনদের আর্তনাদ  © সংগৃহীত

রাজধানী থেকে বরগুনায় ছেড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়ে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এবং ৭৫ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনার পর সুুগন্ধী নদীর তীরের বাতাসে মানুষ পোড়ার গন্ধ ও মৃত স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে।

লঞ্চে থাকা ইউএনও মোহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, ঢাকা থেকে অফিশিয়াল কাজ শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় লঞ্চে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। রাত ৩টার দিকে লঞ্চে অন্য যাত্রীদের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। তখন লঞ্চ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। এরপর তড়িঘড়ি করে বের হয়ে লঞ্চের সামনে থেকে চলে যান। লঞ্চটি এ সময় সুগন্ধা নদীর মাঝখানে অবস্থান করছিল। অনেক যাত্রী নদীতে লাফিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন লঞ্চ থেকে তারাও লাফ দিলে তৃতীয় তলা থেকে দোতলায় পড়ে যান। তখন তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারার ডান পা ভেঙে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: লঞ্চ থেকে লাফিয়ে যেভাবে স্ত্রীসহ প্রাণে বাঁচলেন ইউএনও

লঞ্চের যাত্রী সাইদুর রহমান জানান, তিনি ঢাকা থেকে বরগুনা ফিরছিলেন। ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালের ঠিক আগে গাবখান সেতুর কিছু আগে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সেই আগুন পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে।

লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা বরগুনার তালতলি উপজেলার মোসা. সোনিয়া বেগম (২৫) নামের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে আগুন লাগার সময় তিনি ইঞ্জিন রুমের ওপরে দোতলার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার পরপারি ডেক গরম হয়ে চারিদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চের সঙ্গে বাঁধা দড়ি বেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নামেন। এরপর নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তার মা রেখা বেগম এবং ৫ বছরের বড় ছেলে জুনায়েদ সিকদার এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।

আরও পড়ুন: লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি

প্রত্যক্ষদর্শী লঞ্চের কেবিন বয় ইয়াসিন (১৯) বলেন, লঞ্চের নিচতলার পেছনে ইঞ্জিনরুমের পাশেই ক্যান্টিন। সেখানে বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে লঞ্চে আগুন ধরে যায় এবং তা দ্রুত ইঞ্জিনরুমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে রাখা ১৩ ব্যারেল ডিজেল আগুন বাড়িয়ে দেয়। ইঞ্জিনরুম থেকে আগুন চলে যায় ডেকের দিকে।

ইয়াসিন আরও জানান, ডেকের জানালার পর্দায় লেগে তা দোতলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে প্রথমে পারটেক্স বোর্ডের সিলিংয়ে আগুন লাগে। দোতলায় একটা চায়ের দোকান ছিল। ওই দোকানের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে আগুন আরও তীব্র হয়। এভাবে পুরো লঞ্চটি আগুনে পুড়ে যায়।

আরও পড়ুন: ৪০ বছর বয়সে ৯ম শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছেন কাউন্সিলর

আরও এক যাত্রী বলেন, রাত তিনটা থেকে আগুন জ্বলতে থাকে। যাত্রীরা অনেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। অনেকে হয়তো পারেননি। লঞ্চে শিশু, বুড়ো, নারীসহ কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিল।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লঞ্চের যাত্রী ও তাদের স্বজনেরা জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। আকস্মিকভাবে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের লেলিহান শিখা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন ও ধোঁয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন। এ সময় লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। তাদের ধাক্কায় ও পায়ের নিচে পদদলিত হয়ে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। যে যেভাবে পেরেছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছেন। অনেকেই স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন।

আরও পড়ুন: আঁখির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

নিচতলার ইঞ্জিন রুম সংলগ্ন জায়গায় যেসব যাত্রী ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হন তারাই বেশি দগ্ধ হন। এ সময় কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

লঞ্চের যাত্রী শিমুল তালুকদার বলেন, ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালের ঠিক আগে গাবখান সেতুর কিছু আগে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সেই আগুন পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। জীবন বাঁচাতে তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে অনেকেই লঞ্চে থেকে যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence