বঙ্গবন্ধুর খুনি নিশ্চিত হতে মোসলেমের ডিএনএ পরীক্ষা

  © ফাইল ফটো

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিনকে কলকাতায় আটক করা হয়েছে বলে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম চলতি সপ্তাহে খবর দিয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, আটক হওয়া ব্যক্তিই রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন কি না, তা নিশ্চিত হতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

‘ধৃত বৃদ্ধই কি মুজিব ঘাতক, জিন পরীক্ষা’— এই শিরোনামের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘বাংলাদেশি গোয়েন্দা সূত্রে’র বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধই শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেউদ্দিন কি না, তা নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। সত্তরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধকে রোববার মধ্যরাতে উত্তর ২৪ পরগনার বেরি গোপালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের।

আনন্দবাজারের খবরে আরও বলা হয়, এই সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৪৮ ঘণ্টা যৌথ জেরায় ধৃতকে মুজিব-ঘাতক বলেই মনে হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। কিন্তু তারপরও পরিচয় নিশ্চিত হতে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোসলেউদ্দিনের নিকটাত্মীয়দের জিনের সঙ্গে বৃদ্ধের জিন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পরিচয় নিশ্চিত না হলে ওই বৃদ্ধকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে কারণেই হস্তান্তরের গোটা বিষয়টি বেসরকারি বোঝাপড়ার স্তরে করা হয়েছে।

আনন্দবাজার আরও জানিয়েছে, লকডাউনের মধ্যে সম্ভাব্য মোসলেউদ্দিনের খবর পেয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দারা দিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের শীর্ষ কর্তাদের জানান বলে ঢাকা সূত্রে খবর। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি আধাশহর থেকে এই বৃদ্ধকে ধরে একটি গোপন জায়গায় জেরা শুরু করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ডেকে নেওয়া হয় বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্তাদেরও। তার পরেই পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে বৃদ্ধকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার।

ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন।

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চার জন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও আপিল শুনানি না হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া আটকে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর পর গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি ফের গতি পায়।

২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এভাবে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়মুক্ত হয় বাংলাদেশ।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যায় আসামি আজিজ পাশা। আরেক পলাতক আসামি খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে গত ১২ এপ্রিল।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক। তারা হলেন— খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। এরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এই পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ