এরশাদের মরদেহ আটকে দিলেন রংপুরের নেতাকর্মীরা

সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ রংপুরে দাফনের জন্য আটকে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ২টা ২৯ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এরশাদের চতুর্থ জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার আগে জাপার রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাসহ আরও অনেকেই এরশাদের মরদেহ আটকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এ সময় তারা বলেন, রংপুরে মানুষ এরশাদের সব সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে। ভালোবাসা থেকে সব সময় এরশাদের পাশে থেকেছে, কিন্তু মঙ্গলবার তার দাফন নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে। কারও ষড়যন্ত্র সফল করতে দেওয়া হবে না। এ সময় তারা রক্ত দিয়ে হলেও এরশাদের মরদেহ রংপুর পল্লীনিবাসে দাফনের ঘোষণা দেন।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এরশাদের দাফন রংপুরে করার দাবিতে জানাজা শেষে হট্টগাল শুরু হয়। জানাজা শেষে রংপুরে এরশাদের মরদেহ দাফনের জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে মরদেহ বহনকারী গাড়ি। এ সময় ১৫ মিনিট আটকে রাখা হয় মরদেহ বহনকারী গাড়ি। পরে জনস্রোত উপেক্ষা করে জানাজা মাঠ ত্যাগ করে গাড়ি। সেখান থেকে পল্লী নিবাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় গাড়িটি। গাড়িটিতে আছেন রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান।

এর আগে জানাজাপূর্ব বক্তৃতায় এরশাদকে রংপুরে দাফনের দাবি তোলেন রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে জি এম কাদের বক্তব্য দেন। এ সময় এরশাদের দাফনের বিষয়টি উল্লেখ করে শ্লোগান শুরু হয়। বেলা ২টা ২৫মিনিটে এরশাদের জানাজা শুরু হয়। জানাজার পর এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি ঘিরে ধরে শতশত কর্মী। রংপুরে তার কবর দেয়ার দাবি করেন তারা।

এর আগে দুপুরে এরশাদের মরদেহ কালেক্টরেট মাঠে আসার পরপরই পুলিশি বেষ্টনী ভেঙে মরদেহের কাছে ছুটতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা। উপচেপড়া ভিড়ের মাঝে শুরু হয় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো। নিজ দলের নেতাকর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন ব‍্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে, রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন বেগম রওশন এরশাদ। পাশে তার জন্য কবরের জায়গা রাখার অনুরোধও করেন রওশন এরশাদ।

মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।

এর আগে, গত রোববার (১৪ জুলাই) সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ওইদিন বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এরশাদের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়।

সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের দেখার জন্য রাখা হয়। এরপর বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা শেষ হয়।

এদিকে, এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুর নগরের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।

এছাড়া রংপুরে এরশাদের মরদেহ আনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে রংপুর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ