পবিত্র শবে বরাত আজ, জেনে নিন গুরুত্ব ও ফজিলত

  © প্রতীকী ছবি

আজ পবিত্র শবে বরাত। ইসলামী বিধানে পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। শাবান মাসে শবে বরাতের পরই পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। তাই শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। শব্দ দুটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। বরাত আরবি ‘বারাআতে’র সমশব্দ। যার অর্থও মুক্তি। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সারা রাত মুসলমানরা শবে বরাত পালন করবেন।  

একাধিক হাদিসে রাতটিকে বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিনগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও...।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)

কিন্তু আমাদের সমাজে এ রাতের ইবাদতকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রমাণিত বিষয়াদিরও প্রচলন রয়েছে। যেমন–শবে বরাতের বিশেষ নামাজ। যে নামাজে নির্দিষ্ট কিছু সুরা ও দোয়াই পড়তে হবে, নির্ধারিত কিছু সুরাই একাধিকবার পড়তে হবে এবং এ রাতের রোজাকে আবশ্যক মনে করা ইত্যাদি। যেগুলোর কোনোটিই সহি হাদিস দ্বারা প্রামাণিত নয়। 

শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের ফজিলত বিষয়ে এ হাদিসটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও গ্রহণীয়। এ রাতের সব ফজিলত এ একটি হাদিসের মাধ্যমেই বুঝে আসে। এ রাতের প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তাওবাকারীকে ক্ষমা করে দেবেন, অভাবীকে রিজিক দেবেন, বিপদগ্রস্থকে বিপদমুক্ত করবেন।

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) এর ভাষায় কোনো এক শাবান মাসের অর্ধ রাতে নবী করীম (সা.)- কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি নামাজে দাঁড়ানো এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না?

নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজী (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।

বিশেষ দোয়া
রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রাসুল (স.) একটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই দোয়াটি আমরা পুরো রজব-শাবানে পড়তে পারি। দোয়াটি হলো— اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’  আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (স.) এই দোয়া পাঠ করতেন। (বায়হাকি: ৩৫৩৪; নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬) 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!