১৪ ফেব্রুয়ারি: একই দিনে শবে বরাত-পহেলা বসন্তের সঙ্গে তিন দিবস পালিত হবে

  © টিডিসি সম্পাদিত

৩০ জানুয়ারি দেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা করা হয়, অর্থাৎ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। ফাল্গুনের প্রথম দিনকে বাংলাদেশে বসন্ত বরণ উৎসব হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়, সেটিও ১৪ ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপন করা হবে।

শুধু তাই নয়, মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিন ও বাঙালির অন্যতম উৎসবের পাশাপাশি এদিন বাংলাদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস ও সুন্দরবন দিবসও পালিত হবে। একদিনে ৫টি দিবস পালন-উদ্‌যাপন নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনটা রেখে কোনটা পালন করবেন নেটিজেনরা এ প্রশ্ন রাখছেন।

শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি, শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে আজ কোথাও ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা করা হবে। এমন অবস্থায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।

যে কারণে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে
২০২০ সালের আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে ২০২০ সাল থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়ছে।  

শুধু এই দিন নয়, ১৯৭১ সালের কয়েকটি ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যার ফলে ইংরেজি দিন ঠিক থাকলেও কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বাংলা মাসের তারিখ। নতুন এই বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখ এখন থেকে একই থাকবে প্রতিবছর।

বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি।

১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস
১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন। অনেকে এই দিনটিকে পালন করেন ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। এই দিনেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন, কালক্রমে যেটি গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। তখন জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের বিতর্কিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

তখনকার শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা।এই নীতি ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে জয়নাল ও দীপালি সাহাসহ নিহত হন অন্তত ১০ জন।

২৪ বছরেও ‘রাষ্ট্রীয়’ স্বীকৃতি পায়নি সুন্দরবন দিবস
১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের প্রান্তিক মানুষরা এ দিনটিতে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করেন। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে এবার পালিত হবে ২৪তম সুন্দরবন দিবস। তবে দিবসটি পালনে এখনও।


সর্বশেষ সংবাদ