'পানি তহবিলের ২৬ শতাংশ অর্থ অপচয় হয় দুর্নীতির কারণে'
এনজিও ফোরামের আলোচনায় বক্তারা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:১০ PM
নিরাপদ পানি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরন ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও মানবাধিকার অর্জনের জন্য পানি এবং স্যানিটেশন সেক্টরের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক সংস্থা ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের অর্থায়নে এনজিও ফোরাম, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপ, ডাসকো এবং বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপ। এর মাধ্যমে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের সেবার মান জনবান্ধব ও উন্নত করার লক্ষে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) ডিপিএইচই ভবনের অডিটেরিয়ামে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ আয়োজিত একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনজিও ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশীদ, তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এনজিও ফোরাম এরই মধ্যে ৩টি ওয়াসার (চট্টগ্রাম, খুলনা রাজশাহী) সাথে কাজ শেষ করে বর্তমানে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাথে কাজ করছে।
কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন আমাদের বিভিন্ন কার্যকর শাখার মধ্যে যে কাজগুলো রয়েছে তাকে আরো ফলপ্রসু করতে হবে এবং জনবান্ধব সেবা প্রদান করতে হবে যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকবে। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ঢাকা ওয়াসার মহাব্যবস্থাপক ফজলুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পলিসি সাপোর্ট ব্রাঞ্চের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার এবং উইন এর প্রোগ্রাম লিড ড. ম্যারি গ্যালভিন।
সেমিনারের শুরুতে এন জি ও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বাস্তবায়িত ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি ম্যানেজম্যান্ট প্রজেক্ট এবং একই দাতা সংস্থার অর্থায়নে ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ডাসকো, বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপ কতৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পসমুহের ফলাফল ও সুপারিশ সমুহ তুলে ধরেন, প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ও হেড অফ কমউনিকেশন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
প্রকল্প সমুহের ফলাফল আশাব্যাঞ্জক এবং ইন্টেগ্রিটির ধারনা বাস্তবায়নের প্রশংসা করে প্রধান অতিথি ফজলুর রহমান বলেন, এটা বাস্তবায়নে আমাদের সবার মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে পাশাপাশি জনগনের সেবক হিসাবে সকলের কাছে সেবা পৌছে দিতে হবে। পানি ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরনে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে সিটিজেন চার্টার, শুদ্ধাচার কৌশলের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি সরবরাহে এখনো সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে তা নিরসন করতে হবে।
ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক জার্মানির প্রোগ্রাম লিড ড. ম্যারি গ্যালভিন তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, যেসব তহবিল সরবরাহ করা হয় তার ২৬ শতাংশ অপচায় হয় দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা খাতে। দুর্নীতির কারণে পুরো প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এছাড়া পানি সরবরাহ প্রক্রিয়ায় যৌন হয়রানির মতো অপ্রিয় বিষয়গুলোও তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
সেমিনারে বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার উপস্থাপনায় তিনি বলেন, এসডিজি ৬ বাস্তবায়নে এখনো উল্লেখযোগ্য তহবিল ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি থাকা সত্বেও বর্তমানে যে তহবিল রয়েছে তার এক চতুর্থাংশ তহবিল দুর্নীতির কারণে অপচয় হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
এ সেমিনারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পলিসি সাপোর্ট ব্রাঞ্চের যুগ্মসচিব সাইফুল ইসলাম মজুমদার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের রেগুলেটরি মেকানিজম রয়েছে তবে তা ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে আনতে হবে। তিনি পানি সরবরাহে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে আলোচনা থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশ সমুহ বাস্তবায়নের দাবি হিসাবে ওয়াসার সেবা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ বা মতামত জানানোর কোন মাধ্যম রয়েছে কিনা তা অনেক গ্রাহকই জানেন না। প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত গবেষণা ও সামাজিক নিরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হিসেবে বলেছেন, ওয়াসার সংযোগ পেতে দেরি অথবা হয়রানি, ময়লা পানি-খাবারের অযোগ্য; খাবার পানিতে ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ থাকে; পানি লবনাক্ত; পানির বিল নিয়মিত দেয়া হয় না; পানির বিল বেশি বা পানির ভুয়া বিল; পানি সরবরাহ অনিয়মিত এবং নির্ষ্টি সময় নেই; গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগের অভাব ইত্যাদি। এছাড়া নাগরিকদের ওয়াসার সেবার মূল্য সম্পর্র্কে কোন ধারণা না থাকা; পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা প্রদানকারীদের সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিকদের ধারণার অভাব; নাগরিকদের জন্য ওয়াসার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা কম থাকা এমনটিই উঠে আসে সামাজিক নিরীক্ষার ফলাফলে।
ওয়াসার কার্যক্রমকে জনমুখী করতে বেশ কিছু পরামর্শ পাওয়া গেছে সামাজিক নিরীক্ষায়। সেসবের মধ্যে রয়েছে- প্রচারণা বাড়ানো, জনবল বাড়ানো, ওয়াসার সেবাকে সহজলভ্য করা; পানি ও পয়ঃ নিষ্কাশন সেবাসমূহ সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছে দেওয়া; সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনগণের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ইত্যাদি। সুপারিশ সমুহের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখাকে আরো গুরুত্ব দিয়ে পানি ব্যাবস্থাপনায় ইন্টেগ্রিটি চর্চা করতে হবে, অর্থায়ন, জনগনের অংশগ্রহন বাড়ানো ও ইত্যাদি বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়।