সুন্দরবনে দুই মাস কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা, সহায়তার দাবি

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ  © টিডিসি

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। প্রজনন সুরক্ষায় নেওয়া এ উদ্যোগ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এ দুই মাসে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধকরণকে স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীরা সমর্থন করলেও সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় আহরণ বন্ধ থাকলে কাঁকড়ার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের অধীন নিবন্ধিত ২ হাজার ৯০০ নৌকার মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি কাঁকড়া ধরার জন্য নিবন্ধিত। শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত ২৮ হাজার জেলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জীবিকা নির্বাহ করেন কাঁকড়া আহরণ করে।

বুড়িগোয়ালিনী বন স্টেশন অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়ার প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই মাসের জন্য কাঁকড়া আহরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ রাখলে ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়বে এবং কাঁকড়াশিকারিরা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে।

satkhira Inner-

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান বলেন, কাঁকড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রজনন মৌসুমে আহরণ বন্ধ রাখার মাধ্যমে এর প্রাকৃতিক উৎপাদন নিশ্চিত হবে। এ জন্য জেলেদের আহরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধকরণকে স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ী সমাজ সমর্থন করলেও তারা সরকারের কাছে এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

হরিনগর বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ী রতন মণ্ডল জানান, শ্যামনগর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে প্রজনন মৌসুমে এই রপ্তানি কার্যক্রম শূন্যে নেমে আসে, যা সরাসরি জেলে ও ব্যবসায়ীদের জীবিকায় প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন: ভোলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংলগ্ন স মিল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

জেলে সমসের গাজী (৭০), সালাম গাজী (৬৫) এবং আবুল ঢালী (৭৫) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ফলে আমাদের পরিবারগুলো মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। সরকার থেকে সহায়তা না পেলে এই দুই মাসে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’

স্থানীয়দের মতে, প্রজনন মৌসুমে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটি পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


সর্বশেষ সংবাদ