দুর্গাপূজা যেভাবে হয়ে উঠল বাংলাভাষী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৬ AM , আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ AM
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবার কাছে দুর্গাপূজা প্রধান ধর্মীয় উৎসব নয়। মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষী হিন্দুদের মধ্যেই এটি সবচেয়ে বেশি আনুষ্ঠানিকতা ও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। এছাড়া হিন্দুপ্রধান দেশ নেপালেও এটিই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু দুর্গাপূজা কীভাবে হয়ে উঠল বাংলাভাষী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণে দুর্গাপূজার কোনো উল্লেখ ছিল না। কিন্তু রামায়ণ যখন বাংলা ভাষায় অনূদিত হলো মূলত তখন থেকেই দেবী হিসেবে দুর্গার মাহাত্ম্য বাংলা ভাষী হিন্দুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
‘৬০০ বছর আগে কৃত্তিবাস ওঝা যখন রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করেন, তখন লোকায়ত গল্পে যেখানে দুর্গার কাহিনি প্রচলিত ছিল, সেটি অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। এরপর যেহেতু বাঙালি বাংলা ভাষায় রামায়ণ পেল এবং সেখানে দেখল দুর্গার সাহায্যে রামচন্দ্র রাবণকে বধ করতে পারে, তাহলে সে আমারও প্রাত্যহিক প্রয়োজনে কাজে আসবে।’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ।
আর এভাবেই দুর্গা প্রধানতম দেবী হিসেবে আবির্ভূত হন বাঙালি হিন্দুদের কাছে।
কিন্তু এরপরও প্রধান ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠতে দুর্গা পূজার সময় লেগেছে আরও কয়েকশ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজীন হুদা বলছেন, মূলত ব্রিটিশ শাসনের সময় হিন্দু এলিট ও জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দুর্গাপূজা।
আর পড়ুন: দুর্গাপূজার ছুটি একদিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
‘হিন্দুদের মধ্যে যে শ্রেণি ভাগ ছিল, সেটা নিয়ে তখন অনেক সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যেকারণে তখন হিন্দু ধর্মকে 'মডিফাই' করার দরকার হয়েছিল। তখন বাংলার এলিট শ্রেণি দেখলো যে এমন একটা শক্তির দরকার, যাকে সবাই মেনে নেবে। সেসময় দুর্গার পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর একটা কারণ ছিল, দূর্গার মাতৃরূপ।’
অধ্যাপক হুদা বলছেন, দুর্গার পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরেকটি কারণ বাংলায় তখনো মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রাধান্য ছিল। ফলে দ্রুত বাঙালি হিন্দুরা সেটি মেনে নেয়, এবং ক্রমে অন্য দেব দেবীর পূজাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে দুর্গার পূজা।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত থাকার কারণেই স্থানীয় জমিদার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রজাকে খুশি করার একটা চেষ্টা ছিল। যে কারণে দূর্গা পূজায় আড়ম্বরের মাত্রা বেড়েছিল।
দুর্গাপূজার সময় হিসেবে শরৎকালকে বেছে নেওয়ার কারণ ছিল, যেহেতু এটা কিছুটা অঞ্চলভিত্তিক পূজা ছিল, ওই সময়টাতে বৃষ্টি তেমন হয় না। তাছাড়া এটা নবান্নের সময়। এ সময় ধান ও অন্যান্য শস্য উঠত, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকত। ফলে মানুষ আনন্দ করতে পারত।
সূত্র: বিবিসি বাংলা