বিএনপির সাথে জামায়াতের রাজনৈতিক দূরত্ব কি সত্যিই বাড়ছে?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান  © সংগৃহীত

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। তবে সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠে সরব হওয়ার পর দল দুটির মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দল দুটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা বিষয়ে মতবিরোধ। তৃণমূল থেকে শুরু করে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও কথাবার্তায়ও এই মতবিরোধ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে গত কয়েকদিনে।

যেটি প্রকাশ্যে আসে গত অগাস্টের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন আয়োজনে সময় দেওয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘ ২৫ বছরের রাজনৈতিক মিত্রদের মধ্যে হঠাৎ কেন এমন বৈরি সম্পর্ক তৈরি হলো, সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন না এমন একটি একটি বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য নিয়েও বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যদিও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকলেও বিএনপির সঙ্গে তাদের বোঝাপড়ায় কোনও সংকট নেই।

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জামায়াত অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই একটা দল। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিরোধের প্রশ্ন আসবে কেন?

গত ৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিমিয় সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর আওয়ামী লীগ সরকার যে ‘নির্যাতন’ করেছে তার জন্য প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। জামায়াতের আমিরের এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় রাজনীতির মাঠে।

যদিও একদিন পরে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা আইন হাতে তুলে নেবো না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। শাস্তিও হতে হবে। এর আগে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গত ২৮ অগাস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাদা এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন জামায়াতের আমির।

সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগী দেশ আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রতিবেশী বদলানো যায় না। আপনারা বদলানোর চিন্তা করেন কেন। জামায়াত আমিরের এসব বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় বিএনপিতে।

গত রোববার সাতক্ষীরায় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ না করলেও তিনি জামায়াত আমিরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েকদিনে দেখেছি কিছু রাজনৈতিক দল একটি প্রতিবেশী দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে। সে কারণে তারা বিভ্রান্ত ছড়ায় এরকম কিছু কথাবার্তা বলছে। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও আহবান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা তারেক রহমান।

জামায়াত আমিরের এসব বক্তব্যের জবাব দিতে দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকেও। গত ৮ অগাস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই ভাষণে জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, কিংবা নির্বাচন কতদিন পর হতে পারে এমন কোনও বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল না।

যে কারণে এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় অসন্তোষ জানান।

মির্জা ফখরুল যখন এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তখন ফেনী-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল।

এমন অবস্থায় বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, এখনও শত শত মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। রক্তের দাগ মোছেনি। বন্যায় দেশ আক্রান্ত। এই সময়ে কেউ নির্বাচন নির্বাচন জিকির তুললে জাতি তা গ্রহণ করবে না। জামায়াত নেতার এই বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি।

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা সরে যাচ্ছেন কিংবা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সব জায়গায় নিজস্ব লোকের পদায়ন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের নীরব মনোমালিন্য চলছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ নিয়ে এই জটিলতা দেখা দেয় গত মাসে। তখন বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এমন আভাসের ভিত্তিতে অনেকেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন। এটি নিয়ে সে সময় বেশ বিতর্কও তৈরি হয়।

একটা দলের সরাসরি কেন্দ্রীয় নেতাকে ভিসি নিয়োগের বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হয়। পর তাকে নিয়োগ না দিয়ে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ