পশ্চিমা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন শেখ হাসিনা?

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা  © ফাইল ছবি

ক্ষমতা ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর শেখ হাসিনার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরিষ্কারভাবেই জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনার জন্য ভারত শেষ গন্তব্য নয়। তাহলে শেখ হাসিনার গন্তব্য কোথায় হবে?

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা কোথায় আশ্রয় পাবেন তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে তার ওপর।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক টম কিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া শেখ হাসিনার জন্য খুব ‘কঠিন’ হবে। এমনকি সম্ভব নাও হতে পারে।

গত কয়েকদিনে খবরা-খবর বের হয়েছে যে, শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্তেও পুলিশ এবং সেনা বাহিনীকে আরো বেশি বল প্রয়োগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, পশ্চিমা কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া শেখ হাসিনার জন্য খুব কঠিন হবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে, বিশেষ করে গত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, সেটা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো খুবই মর্মাহত হয়েছে।

মি. কুগেলম্যান বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যে প্রবল শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং শেখ হাসিনা সরকারের যে দমন-পীড়ন ছিল সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর খুবই আপত্তি ছিল।

"এটা শেখ হাসিনার জন্য খুবই চিন্তার বিষয় হবে, কারণ তার পরিবারের অনেক সদস্য পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাস করে। শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘণ নিয়ে যেসব দেশ মাথা ঘামায় না, তারা হয়তো তাকে আশ্রয় দিতে পারে। এটা পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে কোন দেশ হতে পারে, কিংবা গাল্ফ দেশগুলোতে হতে পারে।

ছাত্র বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী যে শক্তি প্রয়োগ করেছে সেটির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল। তারপরেও শক্তি প্রয়োগ করা থেকে শেখ হাসিনা সরকারকে নিবৃত্ত করা যায়নি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-এর টম কিন বলেন, “সে চেয়েছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আরো বেশি মানুষ হত্যা করতে”। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যদি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো তদন্ত করে এবং কোন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় সেটি ভিন্ন পরিস্থিতির তৈরি করবে। সেক্ষেত্রে তিনি ব্রিটেনে থাকলেও নিরাপদে থাকতে পারবেন না।

অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে পতিত স্বৈরাচারদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার নজির রয়েছে ইউরোপ কিংবা আমেরিকায়। কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কদের আশ্রয় দিয়েছে সৌদি আরব।

তাহলে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যতিক্রম হতে পারে কেন?

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব ঘটনা ঘটেছে স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায়। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। তাদের পতনের পর ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন।

টম কিন বলেন, “ বাংলাদেশে যা হয়েছে সেটি সবাই দেখেছে। প্রচুর ভিডিও-ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। বিশ-ত্রিশ আগে বিষয়গুলো এতো দ্রুত ছড়াতো না। যে পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে এবং শেখ হাসিনার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে সেটি বেশ নেতিবাচক। ”

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

“স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপ এবং আমেরিকা তাদের মিত্রদের আশ্রয় দিয়েছে। আমার মনে হয়না শেখ হাসিনার প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা আছে।,”এ কথা উল্লেখ করে টম কিন বলেন শেখ হাসিনা অতীতে কখনো কখনো পশ্চিমাদের পছন্দের তালিকায় যেতে পেরেছে, কিন্তু মিত্র হয়ে উঠতে পারেনি।

তাছাড়া ইউরোপ এবং আমেরিকায় অনেক বাংলাদেশি বসবাস করেন। সম্প্রতি ছাত্র বিক্ষোভে তাদের অধিকাংশ সমর্থন যেমন দিয়েছেন, তেমনি শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতেও সরব হয়েছেন।

টম কিন বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকই আছেন যারা সেসব দেশের নীতি-নির্ধরানী পর্যায়ে বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারেন। এ কারণেও শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেবার বিষয়ে চিন্তা করবে পশ্চিমা সরকারগুলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence