নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে আগামীকালের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক  © ফাইল ফটো

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যেই সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে তা ঠিক করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলেও জানান তিনি। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীও তাকে (আইনমন্ত্রী) নির্দেশ দিয়েছেন আগামীকালের মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার। তিনি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বসবেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন বলবেন। তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, ‘তাহলে কি আগামীকালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ) হবে?’ জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ’।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কালকের মধ্যে যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তো নির্বাহী আদেশে হবে?’ এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়।

এরপর প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কি নির্বাহী আদেশেই হচ্ছে (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ)? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই’।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যারা কোটা আন্দোলন করেছিলেন, তারা কিন্তু বলেছেন, এই সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের (সরকার) কাছে তথ্য–উপাত্ত আছে জামায়াত, বিএনপি, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা (সহিংসতা) করেছে। দলটিকে (জামায়াত) যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্য এবং প্রাণহানির ঘটনায় দলটির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে এর আগে গতকাল সোমবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন জোট। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ১৪ দল নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে যাবে। জুলাই মাসের মধ্যেই সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে বলে বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দল নেতারা জানিয়েছেন। 

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে একমত হয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। তিনি বলেন, ১৪ দলের এ সিদ্ধান্ত সরকার বাস্তবায়ন করবে। বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা কোটা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য’ সৃষ্টির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায় দাঁড়িয়ে এ প্রস্তাব সমর্থন করেন এবং উপস্থিত ১৪ দল নেতারা এতে সমর্থন করলে হাত তুলে জানানোর আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের সব নেতাই দুই হাত তুলে এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। 

এর আগে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী তার দলের পক্ষে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট এবং ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আংশিক রায় ও ২০২৩ সালে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কথা তুলে ধরেন। 

১৪ দল নেতাদের ঐকমত্য পোষণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনিও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। দু-এক দিনের মধ্যে সরকারের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসবে। আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পরই এই অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ ছিল। তখনই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে আজ এতগুলো লাশ দেখতে হতো না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence