কারিগরি শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের

  © সংগৃহীত

কারিগরি শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়েছেন সিপিডির ফেলো ও নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সাতক্ষীরায় যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী দিনে যে নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লব আসছে, তার জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। আর তার চেয়ে জরুরি কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব উন্নত করা। এ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা না বদলাই, তাহলে আগামী দিনে বাংলাদেশের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমরা এক ধরনের প্রতারণা করব। কারিগরি শিক্ষার জন্য সরকারের যেসব প্রচেষ্টা রয়েছে সেগুলোকে আরও আধুনিক ও উন্নত করতে হবে। বাজেট বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে বহুমুখী শিক্ষায় দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এসময় তিনি আগামী দিনের বাংলাদেশের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং দেশের উত্তর অঞ্চল, দক্ষিণ অঞ্চল ও হাওরাঞ্চলের মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় করে বেকারমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি পদক্ষেপ আশা করেন।  

সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মঈনুল ইসলাম মঈন, সাতক্ষীরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরেফিন, সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মহানন্দ মজুমদার, সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এছমত আরা বেগম, দৈনিক দক্ষিণের মশাল পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান কবির, সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিমুন শামস্, ফারহা দিবা খান সাথী, গাজী ইমরান, ইমান আলী, শ্যামল বিশ্বাস, কাজী আল হেলাল, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান, মোজাহিদুল ইসলাম নয়নসহ অনেকে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

এতে কারিগরি শিক্ষার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা, দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণের অভাব, অভিভাবকদের অসচেতনতা, প্রচার প্রচারণার অভাব, আন্তরিকতার ঘাটতি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তার ফলোআপ না করা, উদ্যোক্তাদের পুঁজির অভাব, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, বাজার অনুযায়ী ট্রেড গঠন না করা, শিক্ষার আধুনিকায়নের অভাব, বাজেটে বরাদ্দ কম দেওয়াসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংলাপে বক্তারা বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে সরকারিভাবে কার্যকর স্বীকৃতি দেওয়া, স্বল্প মেয়াদী কোর্সের চাইতে দীর্ঘমেয়াদি এবং কর্ম চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সের ওপর জোর দেওয়া, চলমান পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষা বাজার উপযোগিতার সঙ্গে সমন্বয় করা, দক্ষ জনবল নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ ও পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, পুঁজিহীন উদ্যোক্তাদের সনদকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ সরবরাহ করা, কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া ধারণা বদলনো, সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে সাতক্ষীরা জেলার প্রেক্ষাপট বিবেচনা পর্যটন ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া, চাকরিতে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করাসহ নানা উদ্যোগ নিলে জনশক্তি সম্পদে পরিণত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ