কেন ভাঙা হলো ইত্যাদি পয়েন্ট?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৮ PM , আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৯ AM
‘স্বর্গীয় সৌন্দর্যে’ ভরা পর্যটন স্পটের নাম শহিদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি)। যার অবস্থান ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে। আর এই শহিদ সিরাজ লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় জমান শত শত পর্যটক। অপরূপ সৌন্দর্যে ডুব দিতে আসা পর্যটকসহ সবাই একে শহিদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি) নামেই চেনেন।
তবে, শহিদ সিরাজ লেক নীলাদ্রিতে কয়েক বছর আগে দেশের জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রে করে সম্প্রতি শহিদ সিরাজ লেক নীলাদ্রিতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ইত্যাদি পয়েন্ট’ নামের ফলক। এতে সুনামগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ এলাকায় সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। সমালোচনার মুখে অবশেষে প্রশাসন ‘ইত্যাদি পয়েন্ট’ লেখা স্থাপনা ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটের শহিদ সিরাজ লেকের সামনে ২০১৮ সালে ধারণ করা জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’-এ একটি বিশেষ পর্ব।
ইত্যাদি অনুষ্ঠান হওয়ায় সম্প্রতি এই লেকের সামনে জেলা প্রশাসনকে অনুমতি নিয়ে ইট-পাথরের তৈরি ‘ইত্যাদি ফলক’ নামে ফলক নির্মাণ করা শুরু করে পর্যটন কর্পোরেশন। এ দৃশ্য চোখে পড়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেকেই ফেসবুকে এর তীব্র সমালোচনা করেন।
এমন কান্ডের সমালোচনা করে লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হাসান মোরশেদ ফেসবুকে লেখেন-“মুক্তিযুদ্ধে ৫ নং সেক্টরের টেকেরঘাট সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার এখানে। এই জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করে ভাটি অঞ্চলে দুর্দান্ত সব অপারেশন চালাতেন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা। অপারেশনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরও হতো এখানে। সাচনা যুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজসহ অনেক যোদ্ধার কবর রয়েছে এখানে। শহীদ সিরাজের সম্মানে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় মানুষেরা এই লেকের নামকরন করেছিলেন- শহীদ সিরাজ লেক।”
“বছর কয়েক আগে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক এই লেকসহ এলাকা নিয়ে ‘ডিসি পার্ক’ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। সজ্জন জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ডিসি পার্ক নামকরণ বাদ দেন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ সাইনবোর্ড টানানো হয়, পর্যটকদের জন্য কিছু অবকাঠামোও নির্মাণ করে দেয়া। জেলা প্রশাসক তখন সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।”
“এরপর এখানে হানিফ সংকেত তার ইত্যাদি প্রোগ্রামের একটি পর্ব শ্যুট করেন। সেটাও বছর কয়েক আগের ঘটনা। এখন এই ঐতিহাসিক জায়গাকে কারা ‘ইত্যাদি পয়েন্ট’ নামকরণ করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে? কীসব ফাতরামি কাজ এগুলো!”
সুনামগঞ্জের সাংবাদিক এ আর জুয়েল এমন স্থাপনা নির্মাণের সমালোচনা করে লেখেন- “এটা কোন তামাশা! এই জায়গাটি সুনামগঞ্জের অপরুপ সৌন্দর্যের, মুক্তিযুদ্ধেরস্মৃতি বিজড়িত হিসেবেই সারা দেশব্যাপী পরিচিত। সবাই শহিদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি) হিসেবেই চিনে। এটাকে ইত্যাদি পয়েন্ট নাম দিয়ে কেন পরিচিত করতে হবে। এই জায়গাটি সারাদেশে ব্যাপী পরিচিত বলেই হানিফ সংকেত এখানে এসে ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি করেছেন। প্রকৃতিকে এমন ভেঙেচুরে ইটপাথরে বানিজ্যিক নাম দিয়ে অপরুপ সুনামগঞ্জের এ জায়গাটাকে ইত্যাদির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। নয়নাভিরাম এ লেকটিকে ধ্বংসের এমন উপহাস কারা করছে। এটি শহীদ সিরাজ লেক বাইরের পর্যটকদের কাছে সৌন্দর্যের নীলাদ্রি একে ইত্যাদি নামক বানিজ্যিক নামকরণ দিয়ে কলুষিত করবেন না নয়তো আমরা যারা সুনামগঞ্জকে ভালোবাসি অপূর্ব সুনামগঞ্জকে সারা বিশ্বে আমাদের প্রকৃতিকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করি তারা বসে থাকবো না। এর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাড়াবো। তাই কর্তৃপক্ষ যারাই সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ লেকে এমন মনগড়া বানিজ্যিক তামাশা করছেন সেটি বন্ধ করতে হবে।”
তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে ফলকটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ইত্যাদি পয়েন্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এই ফলক ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল।