নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা বন্ধ নয়, পরিবর্তন আসছে পদ্ধতিতে

নতুন কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে
নতুন কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে  © ফাইল ছবি

দেশে চালু হওয়া নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা বাতিলের যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন  শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘‘এ নতুন কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটা পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার মতো কোনো কারিকুলাম নয়। এতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন হবে।’’

সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবি করা কর্মসূচির বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন, পরীক্ষা না হলে তো আমি মূল্যায়ন করতে পারছি না। বার্ষিক পরীক্ষা তো অবশ্যই থাকবে। পরীক্ষা আমরা কেন নিচ্ছি? এটা দেখার জন্য যে, শিক্ষার্থী তার শিখন ফল অর্জন করছে কি-না। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়ন, এর জন্য শিক্ষকদের আরও মনোযোগী হতে হবে।

এর আগে, গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবি তুলেন অভিভাবকদের একটি অংশ। এ কর্মসূচি সারাদেশের সব স্কুলে স্কুলে পালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ কর্মসূচি থেকে তারা নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অভিভাবকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়। নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তুলে দেয়া হয়েছে সাময়িক পরীক্ষাও। পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সাথে দূরত্ব বাড়ায় তারা ডিভাইসমুখী হচ্ছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের সৃজনশীল পদ্ধতির অভিজ্ঞতা বলছে, এতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মার্কস পাচ্ছে। কিন্তু সে মার্কস তার জন্য যথেষ্টও নয়, আবার সে মার্কসের মাধ্যমে তার মেধা যাচাই করাটাও একেবারে সম্ভব হচ্ছে না। আর বিদ্যালয় পর্যায়ে মার্কসের উপর এতো চাপ যে, এখানে শেখানো গৌণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, নতুন কারিকুলামে শঙ্কার কিছু নেই।

আরও পড়ুন: নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন অভিভাবকরা

চলতি বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে ১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে। আগামী বছর ৩য়, ৪র্থ, ৮ম এবং নবম শ্রেণিতে যুক্ত হচ্ছে এটি। ২০২৫ সালে যুক্ত হবে ৫ম ও দশম শ্রেণি। ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে যুক্ত হবে দ্বাদশ শ্রেণি।

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে বলা হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণির আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। পুরোটাই হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান- এই বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ, আর সামষ্টিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) হবে ৪০ শতাংশ।

একইভাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি বিষয়গুলোয় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির মতো বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ১০০ শতাংশ।

নবম ও দশম শ্রেণিতে গিয়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ দশম শ্রেণির মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটির পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। বাকি বিষয়গুলোয় ১০০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন।

বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। এখন গড়ে ৩২ কর্মদিবস লাগে এসএসসি পরীক্ষা নিতে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পাঁচ কর্মদিবসেই পরীক্ষা নেয়া শেষ হবে।

শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, একাদশ ও দ্বাদশে আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০ শতাংশ। এই দুই শ্রেণিতে সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্প ও ব্যবহারিক ভিত্তিতেও শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। একাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় পড়বে, সেই শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের (মোট তিনটি) পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে।

আর দ্বাদশ শ্রেণিতে নিজ নিজ শাখার তিনটি বিষয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রের মোট ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।

অভিভাবকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় সমস্যা দলগত কার্যক্রমে। দেখা যাচ্ছে স্কুল থেকে প্রদত্ত দলগত কাজটি করতে হচ্ছে স্কুল পিরিয়ডের পর। যে কারণে ছাত্রছাত্রীদেরকে বন্ধু বান্ধবীর বাসায় বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে তা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী অভিভাবক উভয়কেই। অধিকাংশ অভিভাবক স্কুল ছুটির পর তার সন্তানকে অন্য কারো বাসায় নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। 

‘‘বর্তমান শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রোজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হচ্ছে, যার ফলে তারা সম্মুখীন হচ্ছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার। অপরদিকে প্রোজেক্টগুলির ইকুইপমেন্ট যতন্ত্র না পাওয়া, সেই সাথে চড়া দামের কারণে এগুলি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।’’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হবে। এখন পড়াশোনার বিস্তৃতা একটু বাড়বে। শিক্ষার্থীরা একটা বিষয়ে শুধুমাত্র একটা পদ্ধতিতে শিখবে না, শেখার যে পরিধি সেটা বৃদ্ধি পাবে। এখানে চ্যালেঞ্জগুলো হলো শিক্ষক পর্যায়ে। এজন্য আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence