রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি

৩ লাখের চুক্তি, সহযোগীদের ৬০ হাজার টাকা দিতেন ছাত্রলীগের শান্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত  © ফাইল ছবি

ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৩ লাখ টাকায় পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করতেন হাসিবুল ইসলাম শান্ত। এরপর ৫০-৬০ হাজার টাকায় ভাড়া করা লোক দিয়ে পরীক্ষা দেওয়াতেন। এভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার মাধ্যমে প্রক্সি দেওয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন শান্ত। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। নাটোর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও তিনি।

গত মঙ্গলবার রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে সাতজন আটক হন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শান্তর নাম বললে নগরীর কাঁটাখালী এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি ইসরাফিল হোসাইন ৭০ হাজার টাকায় চুক্তিতে জাহিদ আল হাসান সিয়ামের হয়ে প্রক্সি দেন। তাকে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন থেকে আটক করা হয়। এনামুল হকের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন শান্ত। তিনি তানভীর আহমেদের হয়ে প্রক্সি দেন। তানভীরকেও আটক করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার শেখ আবু হানিফ গৌরনদীর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা। তিনি রূপম সরকারের হয়ে পরীক্ষায় দেন। আব্দুর রাকিবকে ৬০ হাজার টাকায় প্রবেশপত্রের ছবি পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রক্সি দেওয়ার চুক্তি করেন শান্ত। কাওসার আলী বিদ্যুৎ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে মূমাইনুল ইসলামের হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রলীগ বৃহৎ সংগঠন। দু’চারজন অপকর্মে যুক্ত থাকতেই পারে। এদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। শান্তর অপরাধ প্রমাণিত হলে নেওয়া হবে।

রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে শেখ আবু হানিফ নামের এক সমাজসেবা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা তিনি। বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। দিনাজপুরের রুপম সরকার নামে একজনের প্রক্সি দিতে এসেছিলেন তিনি। 

ছাত্রলীগ নেতা শান্ত চাকরি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জালিয়াত চক্রের সদস্য। ভাড়াটিয়া হয়ে অনেকেই প্রক্সি দেন। তিনি কয়েক বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে যুক্ত বলে গুঞ্জন ছিল। তবে তিনি আটক হননি। এবার অতিরিক্ত নজরদারির কারণে ধরা পড়েন তিনি। 

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, শান্ত প্রতিটি প্রক্সির জন্য ৩ লাখ টাকা নিতেন। এরপর লোক দিয়ে পরীক্ষা দিতেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালতে তাকে রিমান্ডে চাওয়া হবে। প্রক্সিকাণ্ডে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূলহোতাকে ধরতে কাজ করছে পুলিশ।

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করেছে রাবি প্রশাসন। তাদের মধ্যে শান্ত ও আবু হানিফসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। নগরীর মতিহার ও চন্দ্রিমা থানায় মামলাগুলো করে রাবি প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় কুমার বসাক।