'আমাদের যুব সমাজ আমাদের বড় একটা শক্তি', বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

'শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
'শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী   © সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের যুব সমাজ এটা আমাদের বড় একটা শক্তি'। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২' এর পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন তিনি।

তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তরুণরাই দেশের উন্নয়ন বয়ে আনে। দেশের তরুণ সমাজকে ‘জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত ক্রেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তির পর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নত বাংলাদেশ গড়া। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়ব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি।’

তরুণদের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আর পিছিয়ে যেন না যায়, এটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকে আমাদের তরুণ সমাজই হবে একচল্লিশের কারিগর, যারা দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলে এ দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে সুন্দর জীবন পায়, আমরা সে পথে এগিয়ে যাব।

‘এ দেশটা এগিয়ে যাবে শত বাধা অতিক্রম করে, সেটাই আমি চাই। আমাদের যুব সমাজ এটা আমাদের বড় একটা শক্তি। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা তা হতে চাই না। আমাদের যুবসমাজই পারবে সারা বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে।’

আরও পড়ুনঃক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্টের লোগো উন্মোচন কাল 

আলোচনায়  বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন,  ‘প্রায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমাদের কৃষক সমাজকে উৎসাহিত করছি। সেখানেও আমাদের যুবসমাজ, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন। কারণ উন্নতমানের খাদ্য উৎপাদন, আজকে যদিও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও এটাকে অব্যাহত রাখতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে।’ 

এরপর তার বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের যুবসমাজকে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান আদৌ কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন কি না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই জিয়াউর রহমান এ দেশের যুবসমাজ যারা মেধাবী, এক হাতে তাদের হাতে পুরস্কার যেমন তুলে দিয়েছে, অপর হাতে অস্ত্র, অর্থ দিয়ে তাদের বিপথে পাঠিয়েছে। তাদের তার অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেখানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা, যুবসমাজকে প্রকৃতপক্ষে অস্ত্রধারী বাহিনীতে পরিণত করে নিজেদের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে বিভ্রান্তির পথে ঠেলে দিয়েছিল।’ 

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে দেশের তরুণ ও যুবকদের ওপরই ভরসা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সমসাময়িক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে গড়ে তোলার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যাতে আগামী দিনের জন্য যেন আমাদের যুবসমাজ প্রস্তুতি নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করে দিচ্ছি।’  

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, যেটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর হবে আমাদের দেশে-বিদেশে। কাজেই দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযুক্ত মানবসম্পদ গড়ে তোলা, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। আমরা প্রতিটি উপজেলায় শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। একদিকে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারবে, অন্যদিকে কাজও করতে পারবে।’ 

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বিজয়ীদের প্রত্যেকে পেয়েছেন এক লাখ টাকা ও সম্মাননা স্মারক। আসুন জেনে নেই কারা পেলেন  'শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২' 

যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে অনন্য অবদান রাখায় শরীয়তপুরের মাসুম আলম এবং নেত্রকোণার কামরুন নাহার লিপিকে দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড।

শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি বিভাগে অ্যাওয়ার্ড পান জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসান্দ দ্রুব এবং পেন ফাউন্ডেশনের মেঘনা খাতুন।

দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রাঙ্গামাটির এন কে এম মুন্না তালুকদার এবং লক্ষ্মীপুরের রাজু আহমেদ এই অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।

জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য বরিশালের মিল্টন সমাদ্দার এবং সুনামগঞ্জের কাস্মিরুল হককে দেয়া হয় সম্মাননা।

ক্রীড়া, কলা (চারু ও কারু) ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শেরপুরের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং রাজশাহীর মোস্তফা সরকারও পেয়েছেন এই স্বীকৃতি।

এরকম সুন্দর উদ্যোগ ভবিষ্যতের তরুণদেরকেও উদ্দীপ্ত করবে দেশের উন্নয়নের জন্য নানারকম কাজে অবদান রাখার জন্য। 


সর্বশেষ সংবাদ