চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলন, আ.লীগের ইশতেহারে কী প্রতিশ্রুতি ছিল?

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রথমে ৩৫ বছর করার দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে ৩২ বছরের দাবিতে আরেকটি অংশ আন্দোলন শুরু করে। তবে এখন সবাই ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কথা বলেছিল। তবে সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চললেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার শাহবাগ মোড় অবরোধ বিক্ষোভ করেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। এদিন পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে  শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম। সেখানেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরির বয়স বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেছেন তারা। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কি আসলেই বয়স বৃদ্ধির করার কথা ছিল?

বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে ২০১৮ সালে দেওয়া আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ৩৩ নম্বর পাতায় এ সংক্রান্ত প্রতিশ্রতির বিষয়টি পাওয়া যায়। ৩.১১ নম্বর পয়েন্টে তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অংশে বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা গেছে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকারী সবগুলো সংগঠন একসঙ্গে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন। এ জন্য সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ নামে সংগঠিত হচ্ছেন তারা। শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা দেশের বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হয়ে দাবির পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দেবেন।

আরো পড়ুন: ‘এডিসি হারুন নেকড়ের মতো শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল’

৩৫ চাই আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একইভাবে আন্দোলন করলেও কোনও ফল মেলেনি। এ কারণে এখন সবাই একসঙ্গে নতুন নামে আন্দোলনে নামতে চাই। আওয়ামী লীগ যাতে নতুন ইশতেহার ঘোষণার আগেই বয়স বৃদ্ধি করে সেই দাবি জানানো হবে। নতুন করে আর এমন প্রতিশ্রুতি যাতে দিতে না পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, বয়স বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন। ইশতেহারের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং একাধিকবার বয়স বৃদ্ধির দাবি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, গত শুক্রবারও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ এর দাবিতে শাহবাগে জনসমাবেশের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে শাহবাগ মোড়ে অহিংসভাবে অবস্থান নেন। যদিও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখের পরেও সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। করোনাকালে দুই বছরের অধিক সময় হারানোয় যুব প্রজন্ম ‘সুযোগের সমতা’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

আরও পড়ুন: পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের বিক্ষুব্ধ সংবাদ সম্মেলন

তারা বলছেন, ২০১৮ সালে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করা হবে। গত ২৫ আগস্ট ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে স্বাক্ষাত করলে ফের বিবেচনার আশ্বাস দেন। জনপ্রশাসন সম্পর্কিত সংসদীয়  পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমানও সুপারিশ করার কথা বলেছেন। পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেছেন, সরকার বয়সসীমা বাড়ালে পিএসসির আপত্তি নেই।

এরপরও বয়স না বাড়ানোর কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীও বক্তব্য দেন। বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ভারতে ৩৫-৪০ বছর (রাজ্যভেদে), নেপাল ও ভুটান ৩৫, মালদ্বীপ ৪০, আফগানিস্তান ৩৫, শ্রীলংকা ৩৫ এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর।

এ বিষয়ে সর্বশেষ গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই বললেই চলে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর বিধায় আবেদনের জন্য ছয় থেকে সাত বছর সময় পান। এখন বয়সসীমা বৃদ্ধি করলে চাকরি প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ