কেউ বোরখা পড়বে, কেউ স্কার্ট-স্লিভলেজ ব্লাউজ— এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন   © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছবি তুলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে? অভিযোগ থেকে জানা যায় ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্লিভলেস ব্লাউজ আর শাড়ি পরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফটোগ্রাফার নিয়ে আসে কার্জণ হলে মেয়েটির ছবি তোলার জন্য।

কার্জণ হলে এখন প্রতিদিন শত শত বহিরাগত আসে। কেউ আসে ঘুরতে, কেউ আসে ছবি তুলতে, কেউ আসে পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে আর কেউ আসে ডেটিং করতে। অন্য কারো সমস্যা হয়নি। সিটি কলেজের ছাত্রী স্লীভলেস ব্লাউস পড়াতেই সমস্যা।

একজন শিক্ষকের কাছে মনে হয়েছে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়া অশালীন ড্রেসের মধ্যে পরে। কি সাংঘাতিক! আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের একজন প্রিয় শিক্ষক নিয়মিত স্লিভলেস ব্লাউজ পরে বিভাগে আসতেন, ক্লাস নিতেন। কোন দিন কোন সমস্যা হয়নি। তখনকার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীও স্লিভলেস ব্লাউজ পড়তো। কোন সমস্যাতো কখনো হয়নি। এই ঘটনা কিছুদিন আগের নরসিংদী রেল স্টেশনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। 

আরও পড়ুন: কোরিয়ান ছবি নকলের অভিযোগ, যা বললেন ‘হাওয়া’ পরিচালক

আসলে আমরা শিক্ষকদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ব বিদ্যালয় এইটা ধারণ করতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে বিশ্বের সকল রকমের মানুষ সকল ধরণের ড্রেস পরে ক্যাম্পাসে আসবে। কেউ আসবে স্কার্ট পরে, কেউ আসবে বোরখা পরে, কেউ আসবে হিজাব পরে, কেউ আসবে স্লীভলেস ব্লাউস পরে। এটাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। শুধু তাই না রেল স্টেশনেও যদি কেউ স্লিভলেস ব্লাউজ পরে যায় তাতেও কোন সমস্যা হওয়া উচিত না।

এইটাকে কেন্দ্র করে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা সত্যিই বড় লজ্জার। শুধুই কি এই ঘটনা? বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জায়গায় ছেলেমেয়েরা এক সাথে বসে গল্প করে, আড্ডা দেয়। এই ছেলেমেয়েদের অনেকেই ক্যাম্পাসের আবার অনেকে ক্যাম্পাসের বাহিরেরও। অনেকবার শুনেছি প্রক্টরিয়াল বডি ছেলেমেয়েদের একসাথে দেখলে নাকি উঠিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ক্রমাগতভাবে নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। নারীদের পোশাক নিয়ে পুরুষদের এত চুলকানি কেন? 

আরও পড়ুন: রিভিউ: কী আছে হাওয়া সিনেমায়?

নারীদের স্লীভলেস ড্রেস সারা বিশ্বে অত্যন্ত স্বাভাবিক সুন্দর ড্রেস। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামের নারীদের কোন ব্লাউজও দেখিনি। তখনওতো কোন সমস্যা দেখনি। বিশ্বের অনেক ট্রাইবাল সম্প্রদায় আছে যেখানে নারীরা একদম উদোম শরীরেও থাকে। কেউতো তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে না। সব হলো মানসিকতা। মনে কদর্যতা থাকলে সব কিছুতেই নুড মনে হতে পারে।

গতকাল একটি জাতীয় টেলিভিশনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দেখলাম। সেখানে সঞ্চালক বলেছেন যেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সেই শিক্ষক টেলিভিশনে কথা বলতে চাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে একদম চুপ। চুপ থাকতো সমাধান না। এটি নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি দেখলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি দেখলাম। এই একটি ঘটনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হলো। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করে দেখা উচিত যে সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা। ঘটে থাকলে কে বা কারা দায়ী।

লেখক- অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


সর্বশেষ সংবাদ