সাম্য হত্যা মাদকের ভয়াল থাবার নির্মম পরিণতি

আকাশ আল মামুন
আকাশ আল মামুন  © সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন পুরো দেশ উত্তাল। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোক, ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও বিচার দাবি উঠেছে, যা স্বাভাবিক। তবে সাম্য হত্যার পেছনের মূল কারণটি খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, এটি কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল নয়; বরং এটি মাদকের ভয়াল থাবার এক নির্মম পরিণতি।

সাম্যর রাজনৈতিক পরিচয় বা সম্পৃক্ততা ছিল, এটি হয়তো তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে, তার বিচার দাবি বাস্তবতা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের চারপাশে যে শত শত 'নির্বাক সাম্য' প্রতিদিন মাদকের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তাদের খবর কে রাখে? কে শুনছে তাদের পরিবারের কান্না? কে চাইছে তাদের ন্যায়বিচার?

বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত হওয়া উচিত শিক্ষার আশ্রয়স্থল, বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তির জায়গা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই মাদক সাপ্লাই চেইন তৈরি হয়ে গেছে। নতুন যারা আসে তারা খুব সহজেই সিনিয়র বা বন্ধু নামধারী ‘শত্রুর’ খপ্পরে পড়ে। তাদের শেখানো হয় “এলিট হতে হলে, সমাজে পশ হতে হলে মাদক লাগে!” এই ভয়াবহ মিথ্যে গল্পে অনেকেই ধ্বংসের দিকে পা বাড়ায়।

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয়, একটি জাতিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে শক্ত অবস্থান গ্রহণ না করলে, শুধু সাম্যর নয়; দেশজুড়ে হাজারো সম্ভাবনাময় জীবন অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ বলবৎ রয়েছে, যেখানে ধারা ৯(ক) অনুযায়ী, ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হেরোইন, কোকেইন বা কোনো সিনথেটিক ড্রাগ বহন করলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্ধারিত। ধারা ৩৬ ও ৩৭ অনুযায়ী, মাদক সেবন বা মাদক বিক্রির সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অপরাধ প্রমাণে প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা নজরদারি, ফাস্ট ট্র্যাক ট্রায়াল, এবং অপরাধী চক্রের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব আইন বাস্তবে কতটা প্রয়োগ হচ্ছে? আমরা দেখতে পাই, কিছু বড় অপরাধী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে যায়, আর ছোটখাটো মাদকসেবীরা হয়ে ওঠে আইনের শিকার। এটি আইনের শাসন বা ‘Rule of Law’-এর পরিপন্থী। সত্যিকারের Rule of Law মানে হচ্ছে—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে—হোক সে ক্ষমতাসীন দলের কেউ কিংবা সাধারণ পথচারী।

আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দাবি জানাই বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উন্মুক্ত স্থানে মাদক নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে এই মাদক আসে কোথা থেকে, কারা এ চক্রে জড়িত, কারা ছাত্রদের হাতে তুলে দিচ্ছে এই ধ্বংসের উপকরণ? শুধু বিচ্ছিন্ন অভিযান নয় এটা হতে হবে একটি ‘ন্যাশনাল ক্রুসেড’, এক সর্বাত্মক যুদ্ধ।

সাম্য হত্যার বিচার একটি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করবে। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু না হলে, এই সমাজে অপরাধ জন্ম নেবে প্রতিনিয়ত। আজকের সাম্যকে আমরা হারিয়েছি। যেন আগামীকালের কোনো সাম্যকে আর হারাতে না হয় সেই দায়িত্ব আমাদের সকলের এবং রাষ্ট্রের।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

(মতামত একান্তই ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে ডেইলি ক্যাম্পাসের সম্পাদকীয় নীতিমালার সম্পর্ক নেই)


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence