বাংলাদেশে তরুণদের বেকারত্ব, বিষণ্নতা ও সমাজের অন্ধকার দিক

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণ সমাজ আজ এক নতুন সংকটের সম্মুখীন—বেকারত্বজনিত বিষণ্নতা। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরও কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক ও পারিবারিক চাপ, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং আত্মসম্মানবোধের সংকট তরুণদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সমস্যার কারণ বিশ্লেষণ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে।

কারণসমূহ

প্রথমত, কর্মসংস্থানের অভাব ও অনিশ্চয়তা তরুণদের মধ্যে হতাশার বড় কারণ। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগের অভাব এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

দ্বিতীয়ত, সমাজ ও পরিবারের প্রত্যাশার চাপ তরুণদের মানসিক চাপের অন্যতম উৎস। “চাকরি করছো না?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস করে এবং হতাশা বাড়ায়।

তৃতীয়ত, আর্থিক অনিশ্চয়তা তরুণদের স্বনির্ভর হতে দিচ্ছে না। বন্ধু-বান্ধব বা সমসাময়িকদের প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে নিজেদের ব্যর্থ মনে করা এবং পরিবারের ওপর নির্ভরশীল থাকার মানসিক যন্ত্রণা বিষণ্নতা বাড়ায়।

চতুর্থত, দীর্ঘদিনের বেকারত্ব আত্মসম্মানবোধ কমিয়ে দেয় এবং হতাশাকে তীব্র করে তোলে। সমাজে নিজেদের অবস্থান নিয়ে সংশয় তৈরি হয় এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পঞ্চমত, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অনীহা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তরুণদের একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়।

শেষত, ক্যারিয়ার গঠনের সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকাও তাদের হতাশার অন্যতম কারণ। স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ সম্পর্কে না জানা অনেক তরুণকে ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।

সম্ভাব্য সমাধান

প্রথমত, তরুণদের নতুন দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, কোডিং, গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদি শেখার মাধ্যমে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। ধৈর্য, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, মেডিটেশন এবং মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল রপ্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয়ত, চাকরির বাজার সম্পর্কে জানা এবং নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনারে যোগদান তরুণদের নতুন সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

চতুর্থত, তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তাভাবনা করা উচিত। ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করা বা স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করা তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আলোচনা তরুণদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাদের মানসিক সমর্থন দেওয়া এবং অনুপ্রেরণা যোগানো জরুরি।

বেকারত্ব কখনোই ব্যর্থতা নয়। বরং এটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে যদি আমরা সঠিক পথ খুঁজে নিতে পারি। তরুণদের জন্য দরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই তারুণ্যের বিষণ্নতা দূর করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence