ঈদের দিনে আমরাও আনন্দ করি: গোবিপ্রবির ভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীরা
- গোবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৯ PM , আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৯ PM

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিকগুলোর একটি হলো সংস্কৃতির বৈচিত্র্য। এখানে একই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধর্ম, মত ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে সময় কাটায়, উৎসব ভাগাভাগি করে নেয়। ঈদ শুধু মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব হলেও, এটি আসলে হয়ে উঠেছে সবার আনন্দের উপলক্ষ। ক্যাম্পাসের ভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীরাও ঈদের আনন্দে সামিল হন, বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করেন, কখনও আমন্ত্রণ পেয়ে মুসলিম বন্ধুর বাড়িতেও যান। তাদের চোখে ঈদের অভিজ্ঞতা কেমন? চলুন শুনে আসি।
ঈদের দিনটা আমরাও উপভোগ করি
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বুঝেছি, ঈদ মানে শুধু নামাজ বা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা একটা বড় সামাজিক উৎসবও। আমার মুসলিম বন্ধুরা আগের রাতেই পরিকল্পনা করে কে কার বাসায় যাবে, কোথায় খাওয়া হবে। আমিও প্রায় প্রতি বছর এক-দুই জায়গায় আমন্ত্রণ পাই। সবচেয়ে ভালো লাগে সেমাই, কোরমা আর বিশেষ করে মুরগির রোস্ট! আমরা কয়েকজন মিলে ছবি তুলি, গল্প করি, অনেক মজা হয়।
সুদীপ্ত দাস, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ।
ঈদে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্যিই আনন্দের
ছোটবেলায় ঈদ কেমন হয় খুব একটা বুঝতাম না। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরবর্তীতে আমার মুসলিম ব্যাচমেটরা ঈদের আগের রাতে মেহেদি পরতো, নতুন জামাকাপড় নিয়ে উত্তেজিত থাকতো। ঈদের দিন ওরা আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যেতো। প্রথমবার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে এত খাবার দেখে অবাক হয়েছিলাম! এখন ঈদ এলেই মনে হয়, এ এক পারিবারিক অনুভূতি। আমরা যে যার ধর্ম পালন করলেও উৎসব ভাগাভাগি করাটাই আসল বিষয়।
প্রমা বিশ্বাস
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ।
ঈদে খাবারটাই মূল আকর্ষণ!
আমাদের দূর্গা পূজার দশমীর মতোই ঈদও অনেক বড় উৎসব মনে হয়। সবচেয়ে ভালো লাগে, ঈদের খাবার। আমার মুসলিম বন্ধুরা আগেই বলে দেয়, কোথায় কখন আসতে হবে। আমরা দল বেঁধে বের হই, এক বন্ধুর বাসা থেকে আরেক বন্ধুর বাসায় যাই। অনেকেই নতুন পাঞ্জাবি বা শাড়ি কিনে দেয় ঈদে, সেটা পরেও ছবি তুলি। অনেক সময় আমরা একসঙ্গে খাবারের আয়োজন করি।
সজীব কুমার ভদ্র
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
এটা শুধু ধর্মীয় উৎসব না, বন্ধুত্বের উৎসবও
আমাদের পাহাড়ের গ্রামে ঈদের তেমন রঙ নেই, কিন্তু পড়াশোনার জন্য শহরে এসে দেখলাম, এটা আসলে একটা বিশাল মিলনমেলা। ঈদের দিনে ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে গেলেও, যেসব বন্ধু থেকে যায়, আমরা একসঙ্গে ঘুরতে বের হই। অনেক সময় মুসলিম বন্ধুরা আমাদের রুমে খাবার পাঠায়। বিশেষ করে ঈদের সময় নতুন পোশাক, মেহেদি পরা, ছবি তোলা – এগুলো অনেক আনন্দের। মনে হয়, এটা শুধু ধর্মীয় উৎসব না, বন্ধুত্বের উৎসবও!
উহ্লাচিং মারমা
শিক্ষার্থী, আদিবাসী মারমা সম্প্রদায়, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ।
উৎসবের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভালোবাসার বন্ধন
ভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ঈদ শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক সামাজিক ঐক্যের উৎসব। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, খাবার ভাগ করে খাওয়া, আনন্দ উদযাপন করা– এগুলোই উৎসবের আসল রূপ। তাই ক্যাম্পাসে ঈদের আমেজ শুধু মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি হয়ে ওঠে সবার। ঈদের আনন্দ তাই সব বিশ্বাসের মানুষকে এক সুতোয় গেঁথে দেয়, বন্ধন আরও দৃঢ় করে তোলে।
মো. শাকিল শাহরিয়ার
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ।