ইউনিভার্সিটিতে এরকম ছোট নিষেধ ও ঘটতে দেওয়ার ঘটনা চলতেই থাকবে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৫ PM , আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৯ PM
ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি না করতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা ও প্রতিবাদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এই সমালোচনা রূপ নিয়েছে সশরীরে প্রতিবাদেও। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে ধর্মীয় সংস্কৃতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে মানববন্ধনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গণ-ইফতারেরও আয়োজন করেছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এবার সমালোচনা করেছেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী ব্রাত্য রাইসু। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন তিনি। নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য ব্রাত্য রাইসুর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
ইউনিভার্সিটিতে ইফতার পার্টি আয়োজনে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তা সেই নিষেধাজ্ঞারে যাতে স্টুডেন্টরা অমান্য করতে পারে সেটা ভেবেই দেওয়া হয়েছিল, মনে করি।
ছোট ছোট যুদ্ধ জয়ে বিজয়ের খানিকানুভূতি দেওয়ার মাধ্যমে বড় যুদ্ধ থেকে ছাত্রশক্তিকে বিরত রাখার কৌশল এগুলো। আর তাই আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গণ-ইফতার আয়োজিত হইতেছে।
ইসলামপন্থী ও সরকার বিরোধীদের এই ‘‘বিজয়’’ সরকারের ইচ্ছাতেই যে অর্জিত হয় নাই, তা আমি বলতে পারি না। তবে যেইটা বলতে পারি তা হইল— এরকম ছোট ছোট নিষেধ ও ঘটতে দেওয়ার গল্প চলতেই থাকবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১১ মার্চ) সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইদিনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তি দুটিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আসন্ন রমজান মাসে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
এরপর থেকেই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তুমুল সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানান। শুধু ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এই সমালোচনা ছড়িয়ে পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত চর্চার প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গণ ইফতারের ডাক দেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রমজানের প্রথম দিনে নোবিপ্রবি ও শাবিপ্রবির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ ইফতার করে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (১২ই মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতার পার্টি আয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তা করা হতো। তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় করে ইফতার পার্টি উদযাপন না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমাতে এবারের রমজানে সংশ্লিষ্ট কাউকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট যে কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে।