শিশুরা সমাজ পরিবর্তনের দূত
- মো. সাইফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৬ AM , আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২১ AM
একটি কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি, ‘‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তারাই আগামী দিনের বিশ্বের চালিকা শক্তি।’’ শিশুরা হলো সমাজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দূত। তাদের জীবন ও সমাজের উপর প্রভাব ফেলতে বেশি ভূমিকা পালন করে তার স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরিবেশ। এই পরিবেশগুলোর এমন কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যাতে করে শিশুরা সঠিক বিকাশ লাভ করে সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। সেই ইতিবাচক কাজগুলো হতে পারে শিশুর সামনে হওয়া বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কাজ, কিংবা প্রত্যেকের কাজে সবার অংশগ্রহণ, অথবা সমাজের উন্নয়নে সকলারে অংশগ্রহণমূলক এগিয়ে আসা। এ সকল কিছুই শিশুর মনমানসিকতাকে বিশাল করে তুলে।
পরিবারের দরিদ্রতা, উচ্চপর্যায়ে বসবাসকারী ব্যক্তিদের দ্বারা, রাস্তায় থাকা পরিবার থেকে জন্ম নেওয়া শিশু সমাজে নানাভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে নির্যাতিত হচ্ছে। এই পর্যায়ে শিশুদের ঝুঁকি কিংবা যারা নির্যাতিত করছে তাদেরকে সঠিক বুঝদান বা তাদের মনমানসিকতাকে পালটে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি করতে হবে। যার ফলে ধনীরাও নিজেদের অবস্থা বুঝে মনমানসিকতার পরিবর্তন করে শিশুদের প্রতি স্নেহশীল ও তাদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এগিয়ে আসবে। ফলে সমাজ হবে সুন্দর।
পরিবেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অন্যান্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। যা ইউনিসেফের মতে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দুই কোটিরও বেশি শিশু। এদের মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী শিশু, রাস্তায় বসবাসকারী, সহিংসতার শিকার, নির্যাতিত ও অন্যান্য শিশুরাও। যাদের সুরক্ষার জন্য সরকার একার কিংবা একা কোনো প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় সমাধান করা সম্ভব না। তাই সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি দেশের সরকারি, ও বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও ও সংস্থার ঐক্যতার ভিত্তিতে একযোগে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত সম্ভব করতে হবে। তাহলে এই দুই কোটি শিশুর সবার সুরক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলেও এর সংখ্যা মোটামুটি হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব।
শিশুদের শিক্ষা বা বিদ্যা অর্জন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নানা কারণে তারা শিক্ষা বা বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ছিটকে পড়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় ক্ষুধা, দরিদ্রতা, পরিবারের ভার বহন ইত্যাদি। এ সকল সমস্যা সমাধান কোনো সমাজের একার সম্ভব না। তাই বিত্তবান, সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে এসে তাদেরকে মধ্যহ্নকালীন ছুটিতে খুদা মেটানোর জন্য কিছু খাবার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন টিকা প্রদান করে তাহলে শিশুরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে না পড়া এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
আমাদের সমাজে শিশুদের মধ্যে মেয়ে শিশুরা অধিকার থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়। যাদেরকে পরিবার সবসময়ে বোঝা ভেবে থাকেন। ফলে বয়স একটু বাড়ার সাথে সাথেই তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন। বর্তমানে বাল্যবিবাহ কিছুটা কমেছে তবুও তাদের অধিকার নিয়ে সবসময়ে একটু কাড়াকাড়ি করা হয়ে থাকে। তাই বিদ্যালয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন শিশুদের অভিভাবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে শিশু এবং কন্যা শিশুর বিভিন্ন বিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কার্যাবলী সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কোথাও বাল্যবিবাহ হচ্ছে বলে তা নজরে আসা মাত্রই তথ্য অধিদফতর (পিআইডি) এর জরুরি হেল্পলাইন ১০৯ এ ফোন দিয়ে জানাতে হবে। এর জন্য সমাজের সকল সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুকে তাদের মায়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে রোহিঙ্গা শিশুর বিকাশ ও আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক কার্যকর সম্পর্কে তারাও অবগত হবে।
বাংলাদেশে যে-সকল জায়গায় শিশুদের অধিকার হনন, তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে উদ্বুদ্ধ, তাদের মাদকাসক্তে আসক্ত হয়ে যাওয়া, ও অন্যান্য কার্যাবলীর সকল কিছু একটা নির্দিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে তাদের সকল কার্যক্রমকে ভাগ করে দেওয়ার মধ্যে শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যা কোনো দেশের শিশুর বেড়ে উঠা ও তার পারিপার্শ্বিকতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের সকল অধিকার, ন্যায্যতা নিশ্চিত এর মাধ্যমে তাদেরকে দিয়ে আগামী দিনের সহজ সুন্দর সমাজ ও জাতি উপহার দেওয়া সম্ভব।
লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা কলেজ।