স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’ চালু করতে উদ্যোগ নেবে বিএসএমএমইউ: উপাচার্য

‘এআই ইন উইমেন্স হেলথ: দ্য ইমার্জিং নিউ ফেস অফ হেলথকেয়ার’ নিয়ে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
‘এআই ইন উইমেন্স হেলথ: দ্য ইমার্জিং নিউ ফেস অফ হেলথকেয়ার’ নিয়ে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ  © টিডিসি ফটো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’ চালু করতে বিএসএমএমইউ উদ্যোগ নেবে। স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তনের জন্য আমাদের সবার একসাথে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য-সেবাখাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স চালু করতে বিএসএমএমইউকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আর প্রযুক্তির কল্যাণে মেশিন কাজ করবে মানুষের মতো; তবে আমাদের মনে রাখতে হবে—সে মেশিন বা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে একজন মানুষ। 

বুধবার (০৩ মে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে নারী স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’ (এআই ইন উইমেন্স হেলথ: দ্য ইমার্জিং নিউ ফেস অফ হেলথকেয়ার) নিয়ে এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে দেশের স্বাস্থ্যখাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের সম্ভাব্য কারিগরি ও ব্যবহারিক নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের বেইজ হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং হুইটিংটন হসপিটাল এনএইচএস এর কনসালটেন্ট (উইমেন্স হেলথ) ডা. আশফাক এম খান।

‘এআই ইন উইমেন্স হেলথ: দ্য ইমার্জিং নিউ ফেস অফ হেলথকেয়ার ‍’নিয়ে সেমিনারে অতিথিরা

অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের ডাটা সংরক্ষণ ও ডকুমেন্টেশন তৈরি ও রাখার বিষয়ে  গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই এবং পিছিয়ে থাকবেও না। স্মার্ট হেলথ সিস্টেমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের বিরাট অবদান রয়েছে। বিশ্বটা এখন হাতের মুঠোয়। স্বাস্থ্য সেবাখাতে প্রযুক্তির বিকাশ ও কল্যাণকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। রোবটিক সার্জারিসহ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের যে সকল ব্যবহারিক উপযোগিতা যেখানে যেখানে রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকনোমি এই চারটি পিলারের উপর প্রতিষ্ঠিত হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স (এআই) বর্তমানে প্রযুক্তির বিকাশে বিশেষ অবদান রাখছে। যেমন নারী স্বাস্থ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স এর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসা, ক্যান্সার নির্ণয়, ক্যান্সার প্রোগনোসিস, বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা, প্রসবকালীন শিশু স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা নির্ণয় ছাড়াও হৃদরোগ, অন্ত্রে এবং খাদ্যনালীর জটিলতা নিরসনে এর ভূমিকা অপরিসীম।

সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, স্বাস্থ্যখাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে সময় ও অর্থ ব্যয় সাশ্রয়সহ নানা বিষয়। তারা বলেন, তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। রোগীর জন্য যেটা সর্বোত্তম সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করতে হবে। ভালো চিকিৎসক হওয়ার বিকল্প নাই। তবে প্রয়োজনীয় নিত্যনতুন প্রযুক্তির বিষয়ে জানা থাকতে হবে। প্রযুক্তির সুবিধাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমৃদ্ধির ও কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। যদি ইনপুট ভালো দেওয়া যায় এর ফলাফলও ভালো পাওয়া যাবে। আবার প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটা মানুষকে বা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদেরই দেখতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. আশফাক এম খান

আর অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডা. আশফাক এম খান বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স (এআই) নিয়ে আমাদের পাশ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের অসংখ্য প্রকাশনা রয়েছে। সে অর্থে আমাদের খুব বেশি প্রকাশনা নেই; এখাতে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের (এআই) মধ্যেই রয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা হয়তো আমরা বুঝতে পারছি না; কিন্তু, এর সুফল আমরা ঠিকই পাচ্ছি। এজন্য আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে; আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা চাইলেও এআইকে বাদ দিতে পারবো না; এআই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবেই-তা মানতে হবে।

এসময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমই ‘র উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোঃ একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শাহ আলম, অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেগম নাসরীন, ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহরীন আক্তার, রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানু প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ