নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দ্বৈত পেশায় মাদ্রাসার সুপার
- মো. আবদুর রহমান
- প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ PM , আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ PM
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আবদুল আলীর বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে দ্বৈত পেশায় থেকে নিয়মিত বেতন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিদেশে থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসাটির দাতা সদস্য এবং ছাত্র প্রতিনিধির পক্ষ থেকে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মাদ্রাসাটির দাতা সদস্যের পক্ষে মো. ছামাউল ইসলাম এ সংক্রান্ত অভিযোগ দিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে। অন্যদিকে ছাত্র প্রতিনিধি মো. সোহেল রানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, মাদ্রাসা সুপার মো. আবদুল আলী নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে একই সময়ে সৌদি আরবে অবস্থান করে হজ ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এমনকি, বিষয়টি বারবার গোপন রাখারও অভিযোগ রয়েছে এই সুপারের বিরুদ্ধে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসা অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সুপার আবদুল আলী বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে গিয়েছেন। সর্বশেষ এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছুটির বাইরে সৌদি আরবে অবস্থান করেন ৭৮ দিন। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কর্মকালীন একাধিকবার ছুটি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না।
অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ সময় মাদ্রাসা সভাপতি আনছার আলী মালিতাকে না জানিয়ে চলে যেতেন। একই ঘটনা এর আগের সভাপতি মো. রজব আলী (২০১৬-২০১৯) সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েও এমনটি ঘটেছে।
অথচ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক-কর্মচারী চাকরিকালীন একবার হজব্রত পালন ও জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজনে অর্জিত ছুটি ভোগ ছাড়া হজ ব্যবসার ক্ষেত্রে একাধিকবার অর্জিত ছুটি ভোগ করতে পারবে কিনা তা এই অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা জরুরি বলে অভিযোগে দাবি করা হয়।
মাদ্রাসার রেজুলেশন খাতা থেকে সঠিক তথ্য আসবে না বলে দাবি করে ছাত্র প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, জালিয়াতি করে এই সুপার আলী সুবিধামতো রেজুলেশন খাতা তৈরি করেছেন। ২০২৪ সালে তিনবার সৌদি আরবে গিয়েছেন।
জানা যায়, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌকির আহমেদকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা সুপারকে তার ব্যক্তিগত পাসপোর্ট এবং মাদ্রাসার হাজিরা খাতা নিয়ে উপস্থিত হতে বলেছে। তবে ওইদিন মাদ্রাসার শিক্ষক উপস্থিত হননি। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন করে উপজেলা এসিল্যান্ডকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, মাদ্রাসার সুপার মো. আবদুল আলী জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি মাদ্রাসায় এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলছে না বলেও জানান তারা।
এদিকে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ দিলে বোর্ড মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তদন্ত কমিটি তার তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এতে মাদ্রাসা সুপার মো. আবদুল আলীর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করবো।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুপার মো. আবদুল আলীর সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃত জানায়। এসময় তিনি জানান, তার সম্পর্কে মাদ্রাসার সভাপতি অভিযোগ করেছেন, তাই সভাপতির সাথে কথা বলতে তিনি পারামর্শ দেন।