মাদ্রাসা থেকে বের হচ্ছে পত্রিকা, লেখক-সাংবাদিক শিক্ষার্থীরাই
- মুহা. আব্দুল্লাহ আল নাঈম
- প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৫ AM , আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬ AM
নতুন উদ্যোগ, নতুন উদ্যোম, নতুন কিছু। দেশের কোন একটি মাদ্রাসা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে নিজ ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাপা কাগজের পত্রিকা। মাদ্রাসায় সাধারণত ব্যতিক্রমী প্রতিভামূলক কার্যক্রম দেখা যায় না। তবে এ মাদ্রাসাটি আধুনিকতার ছোঁয়ায়, সৃজনশীলতায় তার ধারা বজায় রেখে চলেছে। মাদ্রাসাটির অবস্থান ঢাকার পাশেই গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে।
তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী শাখার সাংবাদিকদের সংগঠন তা'মীরুল মিল্লাত সাংবাদিক ফোরামের (তামিসাফ) উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী এ ছাপা কাগজের পত্রিকা বের করা হয়েছে। পত্রিকাটির নাম ‘পাক্ষিক মিল্লাত বার্তা’। ১৫ দিনে একটি সংখ্যা বের হয়। যা প্রকাশের প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নিজ প্রতিষ্ঠানটিতে।
নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক পত্রিকাটি এখন পাঠকের হাতে হাতে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সবাই এর পাঠক। বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে পড়ছেন পত্রিকাটি। গত ১৬ মার্চ মাদ্রাসার প্রত্যেকটি দপ্তরে পৌঁছে যায় এ পত্রিকা। প্রথম সংখ্যা প্রকাশের দিনই অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের এ অকৃত্রিম ভালোবাসা পত্রিকাটিকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে বলে জানিয়েছেন তা'মীরুল মিল্লাত সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মির্জা নাদিম।
পাক্ষিক মিল্লাত বার্তা পত্রিকাটির মার্জিত পৃষ্ঠাসজ্জা, সংবাদ, সম্পাদকীয় এবং কাগজের মান প্রশংসা কুড়িয়েছে পাঠকের। পত্রিকাটিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন পাঠকরা। এ তালিকায় রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আশপাশের ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
প্রথম সংখ্যায় সর্বশেষ আলিম তথা একাদশের রেজাল্ট নিয়ে ‘মাদরাসা বোর্ডে এবারও শীর্ষে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা’ ছিল প্রধান প্রতিবেদন। তবে মাদরাসার ‘পুকুরের অব্যস্থাপনা’, ‘সুপেয় পানির সংকটে ছাত্রদের গণ আন্দোলন’, মাদরাসার পাশের আবাসিক অঞ্চলস্থ ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা ধীরগতি পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন’সহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে আলোচনা ও প্রশংসায়।
মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থীর প্রায় সংখ্যা ১২ হাজার। গত বৃহস্পতিবার পত্রিকাটি ছাপানো হয়েছিল দু’হাজার। পত্রিকার প্রচার এবং বিক্রির লক্ষ্যে গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মামাদ্রাসা বসানো হয় বিক্রি স্টল। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে পত্রিকাটির বিক্রি এক হাজার কপি ছাড়িয়ে গেছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে একজন পাঠক বলেন, এ ধরনের আয়োজন দেখলে সত্যি খুবই ভালো লাগে। মন ভালো করে দেয়ার মতো সৃজনশীল উদ্যোগ। ধন্যবাদ জানাই তা'মীরুল মিল্লাত সাংবাদিক ফোরামকে (তামিসাফ)। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
পত্রিকাটির আরেক পাঠক আব্দুল্লাহ আহাদ জানিয়েছেন, মাত্র ৮ টাকা মূল্যের পত্রিকাটির প্রথম ইম্প্রেশনটা অসাধারণ, কাগজের কোয়ালিটি উন্নতমানের। মাত্র চার পাতার এ পাক্ষিক পত্রিকায় অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞাপন তেমন নেই, বেশিরভাগ নিউজ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক। শেষ পাতার কুইজ প্রতিযোগিতাও ভালো একটি উদ্যোগ।
তিনি আরো জানান, পত্রিকাটির পাঠক হিসেবে আমার বলতে হয়– পত্রিকায় ব্যবহৃত ছবিগুলোর রেজুলেশন আরো বাড়াতে হবে। শিক্ষা, এডমিশন, স্কলারশিপ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আপডেট সংক্রান্ত তথ্য যুক্ত করলে ভালো হবে।
এ বিষয়ে তা'মীরুল মিল্লাত সাংবাদিক ফোরামের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল নাঈম জানায়, ছাপা কাগজের পাক্ষিক মিল্লাত বার্তা পত্রিকাটি পুরো ক্যাম্পাসে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে কিছু পরামর্শ পেয়েছি, আগামী সংস্করণে উক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে পত্রিকাটির আর্কাইভ আরো সুন্দর করার চেষ্টা করবো।
সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মির্জা নাদিম জানায়, পাঠকের ব্যাপক সাড়া দেখে আমরা অভিভূত। এ ভালোবাসা কাজের প্রতি আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে ফোরামের সদস্যদের। ছাপা কাগজের পত্রিকা ছাত্র, শিক্ষক এবং ক্যাম্পাসের দপ্তরগুলোতে যাওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন এবং অফলাইনে দারুণ প্রশংসা পাচ্ছি। আগামীতে পাঠকদের ভালোবাসার প্রতিদান আমরা ভালো কাগজ করার মাধ্যমে দিতে চাই।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার জন্য যেসব সংবাদ কল্যাণকর, সেসব সংবাদ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে মিল্লাত বার্তা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের মানুষের হৃদয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করবে মিল্লাত বার্তা—বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।