১৩ দাবিতে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মানববন্ধন
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৫ PM , আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৫ PM
মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকরি জাতীয়করণ করাসহ ১৩ দাবিতে মানববন্ধন করেছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীন। আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিক।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী। মানববন্ধন শেষে ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে কুরআন-সুন্নাহ ও সুদীর্ঘ কালের মুসলিম ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক চাহিদার সমন্বয় সাধন করে একটি যুগোপযোগি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে- এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু ২০২২ সালে এনসিটিবির ব্যবস্থাপনায় ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে যে ৯টি বইয়ের (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান) পাইলটিং/পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান করা হয় সেগুলো মাদ্রাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য (জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ বর্ণিত) এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে। এসব পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত কিছু ছবি, চরিত্র, চিত্র, শব্দ, বাক্য, তথ্য ও উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং শঙ্কিত করে তুলবে।
তারা বলেন, এই বইগুলো ২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে স্কুল ও মাদ্রাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে মর্মে এনসিটিবি ঘোষণা দিয়েছে। অধিদপ্তরসমূহ ইতোমধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯টি বইয়ের মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বানী, উদ্ধৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত কোনো কোনো বইয়ে আপত্তিজনক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যেগুলো মুসলমানদের বিশ্বাস, আদর্শ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানবন্ধন থেকে পাঠ্যক্রমে এসব অন্তর্ভূক্ত না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।
মানববন্ধন থেকে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবি হলো-
১) মাদ্রাসা শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যবই তৈরির লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে এনসিটিবি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন;
২) দাবিকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান অব্যাহত রাখা;
৩) সাধারণ শিক্ষার ন্যায় মাদ্রাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করা;
৪) বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকরি জাতীয়করণ করা;
৫) সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান;
৬) ২০১৮ সালে প্রণীত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করা;
৭) নারী কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা;
৮) আরবি প্রভাষকগণ যাতে উচ্চতর পদে আসীন হতে পারেন সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ;
১৯) অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের সুযোগ প্রদান;
১০) কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেল প্রদান;
১১) মাদ্রাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন;
১২) স্কুল ও কলেজ নীতিমালা-২০২১ এর সঙ্গে মাদ্রাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর সমন্বয় সাধন করে মাদ্রাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা;
১৩) ইনক্রিমেন্ট বঞ্চিত দুই হাজার শিক্ষককে অনতিবিলম্বে বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদান।
জামিয়াতুল মোদার্রেছীন ভোলা জেলার মানববন্ধন স্মারকলিপি প্রদান: ভোলা প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ভোলা জেলা শাখা। আজ সকাল ১১টায় ভোলা সদর কে, জাহান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভোলা জেলা সভাপতি ও করিমজান মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুল খালেক। মানববন্ধন শেষে ভোলা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে বিজাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগি নয়। মাদ্রাসায় এসব বই পাঠ্যপুস্কক হিসেবে গ্রহন ও ব্যবহারের প্রশ্নেই আসেনা। এধরনের পাঠ্যপুস্তক মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।