ছাত্রলীগ পরিচয়ে আলিয়া মাদ্রাসার হলে মাদকের আসর, নীরব ভূমিকায় প্রশাসন

আজিজুল হক (ইনসেটে)
আজিজুল হক (ইনসেটে)  © সংগৃহীত

দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ রাজধানী ঢাকার বকশিবাজারের সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ায় নেই ছাত্রলীগের বৈধ কোন কমিটি। সেই সুযোগে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মাদ্রাসার আবাসিক হলে নিয়মিত মাদকের আসর বসায় আজিজুল হক নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পায়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের এমন নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

নরসিংদী সদরের বেলাল নগরের মো. মাজহারুল হকের ছেলে আজিজুল হক (২৫) মাদক মামলায় একাধিকবার জেলে গিয়েছেন। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ে মাদক কারবারে। শুধু তাই নয়, একাধিক মামলার সাথে তার নাম থাকায় মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ তাকে বহিষ্কার চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও আসেনি কোনো প্রতিকার। ফলে এখনও মাদকসহ অন্যান্য অপকর্মের সাথে জড়িত আজিজুল। 

জানা যায়, মাদ্রাসা-ই আলিয়ার প্রাইভেট শিক্ষার্থী আজিজুল হক বিবাহিত হয়েও ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাদ্রাসাটির ছাত্রলীগের  নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মাদ্রাসাটির অনিয়মিত (প্রাইভেট) ছাত্র। তবে কাশগরি হলের ৩৭৫নং কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আজিজুল হক। হলের ছাদ, বারান্দা ও কক্ষে আজিজুল হক বহিরাগতদের নিয়ে প্রতিদিন ইয়াবা, গাঁজা সেবনের আসর বসায়। মাদকের গন্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। 

ছাত্রবাসে বৈধভাবে অবস্থানকারী বেশ কিছু শিক্ষার্থী হল কর্তপক্ষ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসগুলো পরিদর্শন করে আজিজুল হক মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত বলে প্রমাণ পায়।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট শিক্ষক পরিষদের সভায় আল্লামা কাশগরি (রহ.) হলের ৩৭৫নং কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থানরত আজিজুল হক ও তার সঙ্গী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর দুইমাস পেরিয়ে গেলেও মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামী ছাত্রলীগের কথিত নেতা আজিজুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। 

২০২০ সালের চকবাজার থানার এফআইআর নং ৪, জিআর ৩৫১/২১নং মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গিয়ে জামিনে মুক্ত হলেও ২০১৫ সালে একই থানার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নং ৫৩০/১৫ নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার মামলা নং জিআর ৪২৬/২০, থানার নং ৩৮ মামলার আসামী আজিজুল হক। একাধিক মামলার সাথে সাথে তার নামে মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও আসেনি কোনো প্রতিকার। এখনও মাদকসহ অন্যান্য অপকর্মের সাথে জড়িত আজিজুল। 

জানা গেছে , আল্লামা কাশগরি হল ও শহীদ ইব্রাহীম হলে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও বিভিন্ন থানা ইউনিটের পদধারী নেতাদের হলের রুম দখল করে আজিজুল হক সেখানে অবস্থান করে মাদক ব্যবসা করে থাকেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্র অধিকার পরিষদের আলিয়া মাদ্রাসা শাখার সহ-সভাপতি মাহদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাওন মাহমুদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাহমুদ প্রমুখ।

সম্প্রতি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের দেয়াল লিখনে আলিয়া মাদ্রাসার ক্যাম্পাস ও হলের দেয়ালগুলো ছেয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আজিজুল হকের ঘনিষ্ঠজন মাহমুদুল ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নগর নেতা। আজিজুল সাহস যুগিয়েছে বলেই তারা এসব দেয়াল লিখন করতে সাহস দেখিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমি গরীব ঘরের ছেলে, খুব কষ্ট করে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলাম। হলে থাকতাম কিন্তু আজিজুল আমাকে দিয়ে বিভিন্ন সময় মাদক কারবারি করাতে চাইত। আমি রাজি না হলে আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছে। এখন যদি আমার নাম প্রকাশ করি তবে আমাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিবে না আজিুজল।

সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ বলেন, শিগগির এ বিষয়ে সমাধান হবে। তবে এই মুহুর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না।

অভিযোগের বিষয়ে আজিজুল হক বলেন, চকবাজার থানার মামলাটি অনেক আগের। বাকি সকল তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। 

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এটা অনেক পুরোনো মামলা, তাই নথি দেখে বলতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ