শুধু বিনোদনের জন্য নয়, শেখার জন্য বই পড়তে হবে

  © টিডিসি ফটো

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের বৃহৎ একটা অংশ যখন চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির বই নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়, ঠিক সেসময় তরুণদের কেউ কেউ সাহিত্যচর্চা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছে। এমনই একজন তরুণ হলেন জনি হোসেন কাব্য।

যিনি একজন তরুণ লেখক। ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। তার প্রথম বই ‘ছড়ার প্যাকেট’। ২০১৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। ছড়ালেখার পরামর্শমূলক বই ‘ছড়ামর্শ’র জন্য তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। হয়েছেন পাঠক-সমাদৃত।

জনি হোসেন কাব্য ছড়া বিভাগে প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার, শিশুসাহিত্যে অক্ষরবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কারসহ বেশকিছু সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। পাশাপাশি মাসিক শিশুকিশোর ম্যাগাজিন ‘ভোঁদৌড়’ সম্পাদনা করেন। এ পর্যন্ত তার বইয়ের সংখ্যা ১৪টি। লেখার মাধ্যমে গল্প বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। লেখালেখি ও ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি— আসমাউল মুত্তাকিন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন?
জনি হোসেন কাব্য: আলহামদুল্লিল্লাহ্, করোনা সংকটের মধ্যে থেকেও যতটুকু ভালো থাকা যায়, আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনায় কেমন যাচ্ছে আপনার দিনকাল?
জনি হোসেন কাব্য: একদম ঘরে বসেই। প্রচুর পড়া হচ্ছে। লেখালেখিও মোটামুটি হচ্ছে। এইভাবেই যাচ্ছে সময়গুলো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
জনি হোসেন কাব্য: কয়েকটি পাণ্ডুলিপি গোছানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে শিশুকিশোর গল্প লিখছি। তা নিয়েই ব্যস্ততা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশবটা কেমন ছিল?
জনি হোসেন কাব্য: খুবই রাজকীয়। আমি যখন অনেক ছোট, তখন আমার দাদাই আমাদের পুরো পরিবার দেখাশুনা করতেন। উনি আমাদের শৈশবকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। কোনোকিছুর অপূর্ণতা রাখেননি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাস জীবন উপভোগ করেছেন?
জনি হোসেন কাব্য: একেকটা একেক রকম ছিল। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুবই সুন্দর ছিল। খেলাধুলা, আড্ডা, আনন্দ হৈ-হল্লা করেই কাটিয়েছিলাম। কিন্তু কলেজের ক্যাম্পাস পড়ার চাপে খুব একটা উপভোগ করতে পারিনি। সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভালোই উপভোগ্য ছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?
জনি হোসেন কাব্য: শুরুটা সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই। বড় ভাইয়ার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতেন। সেসব ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া কার্টুনগুলো ভালো লাগত। ভাইয়া বাসায় না থাকলে সেই কার্টুনগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। একটা সময় খেয়াল করলাম, সেসব কার্টুনগুলো গল্প ও ছড়ার পাশে ছাপা হচ্ছে। আস্তে আস্তে গল্প ও ছড়া পড়তে থাকলাম।
সেখানে ছোট ছোট বাচ্চারাও লিখত। তাদের লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। ভাবতাম, ওরা পারলে আমি কেন পারব না? পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন, জার্মানে ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল। তো, সে বিষয়টি নিয়ে লিখে ফেললাম একটি ছড়া। সহপাঠীরা দেখল। প্রসংশা করল। তাদের মাধ্যমে তাদের বড় ভাইয়া-আপুরা দেখলেন। তারাও উৎসাহিত করলেন। এভাবেই শুরু।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি তো লেখালেখি করে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তারমধ্যে ‘প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার’ ও ‘অক্ষরবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার’ অন্যতম। এ দুটি পুরস্কার পাবার পর অনুভূতি কেমন ছিল?
জনি হোসেন কাব্য: প্রথমটির বেলায় খুবই স্বাভাবিক ছিল অনুভূতি। কারণ এখানে ছড়া বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিলাম। খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তবে সেই তুলনায় ‘অক্ষবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার’ জিতে বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। সেখানে ‘শিশুকিশোর গল্প’ বিভাগে জমা দিয়েছিলাম। দেশসেরা বেশ কিছু শিশুসাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছিলেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লেখালেখির কারণে কোথাও বাঁধার মুখে পড়েছিলেন কখনও?
জনি হোসেন কাব্য: না। সেভাবে বাঁধার মুখে পড়িনি কখনও। আমার পরিবেশ সবসময়ই লেখালেখির জন্য উপযুক্ত ছিল। এ দিক থেকে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
জনি হোসেন কাব্য: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি ভোলার মতো না। আমাদের ডাক বিভাগটি খুবই অনুন্নত ছিল। তাই ডাকে কোথাও লেখা পাঠাতে পারতাম না। মোবাইল হাতে আসার পর নিজে নিজে চেষ্টা করেছিলাম একটি ম্যাগাজিনে ছড়া মেইল করার জন্য। আমি ঠিক জানতাম না মেইলটি হয়েছিল কিনা। দুমাস পরে সেই ম্যাগাজিনে লেখাটি ছাপা হলো। ম্যাগাজিন হাতে আসার পর অন্যসময় যেভাবে চোখ বুলাতাম, সেভাবেই চোখ বুলাচ্ছিলাম। হঠাৎ নিজের লেখায় চোখের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত কেঁপে ম্যাগাজিনটি পড়ে গিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে, বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমার লেখা ছাপা হয়েছে!

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতিটাও জানতে চাই?
জনি হোসেন কাব্য: বই প্রকাশের অনুভূতি বলে-লিখে পুরোটা বুঝানো যাবে না। বই করার ক্ষেত্রে এক বড় ভাই সাহায্য করেছিলেন। তিনিই সব করেছিলেন। আমি গ্রামে ছিলাম। অথচ বই প্রকাশ হয়ে ঢাকা বইমেলায় হরদম বিক্রি হচ্ছিল। স্টলে অন্য বইয়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল বইটি। মেলা শেষে বই হাতে পেলাম আমি। প্রথম বইয়ে প্রথম স্পর্শ ভোলার মতো ছিল না। বারবার ছুঁয়ে দেখেছি, বই হাতে আসার পর কতবার যে পড়ে ফেলেছি! টানা কয়েকদিন সে বই বিছানার পাশে রেখে ঘুমিয়েছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মোটামুটি সবগুলো বই-ই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে লেখক হিসেবে কোন বইটি আপনার নিজেরই প্রিয়?
জনি হোসেন কাব্য: সবগুলো বই-ই প্রিয়। একেক বই একেকভাবে। তবে ‘ছড়ামর্শ’ বইটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। এ বইটি আমার পরিচিতি বাড়িয়েছে, বাড়াচ্ছে, বাড়াবেও হয়তো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আগামী বইমেলা নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা?
জনি হোসেন কাব্য: আগামী বইমেলায় ‘ছড়ামর্শ- ২’ আসতে পারে। এখানে আমি লেখালেখির অলঙ্কার, লেখালেখির গুপ্তধন, ব্যবহারিক বানান, লেখালেখি বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ বিষয়ে কাজ থাকবে। এছাড়া ছড়া ও গল্পের বইও আসবে, ইনশাআল্লাহ্।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রিয় লেখকদের তালিকায় কারা আছেন?
জনি হোসেন কাব্য: অনেকেই আমার প্রিয় লেখক। কয়েকজনের যদি নাম বলি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়, জহির রায়হান, হুমায়ূন আহমেদসহ আরও অনেকেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লেখালেখির বিষয়ে আপনার মা-বাবার প্রতিক্রিয়া কী?
জনি হোসেন কাব্য: বই প্রকাশ হবার পর আমার লেখালেখির বিষয়টা বাবা-মা জানতে পেরেছিলেন। উনারা খুবই গর্বিত৷ বই বের হলেই উনাদের জন্য এক সেট পাঠিয়ে দেই। খুব খুশি হন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন লেখকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?
জনি হোসেন কাব্য: আমি নিজেও নতুন। এতটুকুই বলব- পড়ার বিকল্প নেই। পড়তে হবে। তবে সে পড়া শুধু বিনোদন পাবার জন্য পড়লেই হবে না, শেখার জন্যে পড়তে হবে। কোনো লেখা পড়ে মুগ্ধ হলে অনুভব করতে হবে কেন মুগ্ধ হয়েছি। সেটি ধারণ করতে হবে। মুগ্ধ না হলে সেটিও অনুভব করতে হবে কেন হইনি। এভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
জনি হোসেন কাব্য: পাঠকদের বলব- বেশি বেশি ভালো বই পড়ুন। ভালো লেখা পড়ুন। যত বেশি ভালো বই পড়বেন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য তত বেশি ভালো থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
জনি হোসেন কাব্য: তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence