বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসা-সংসার সামলে ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ইউনিটে চান্স সাদাতের

সাদাত হাসান তালুকদার
সাদাত হাসান তালুকদার  © টিডিসি

সাদাত হাসান তালুকদার। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন ইউনিটসহ ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তিনি ঢাবি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ১৩তম, বিজ্ঞান ইউনিটে ৩৬তম, কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে ৭১তম হয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘গ’ ইউনিটে ২১তম ও আইন অনুষদে ১৭তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ৭৯তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ৫ম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে  ৩৫তম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি)  ‘খ’ ইউনিটে ১০১তম স্থান অর্জন করেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্য, সংগ্রাম নতুন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—তাহমিনা আক্তার। 

আপনি ৪ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কী?

আলহামদুলিল্লাহ।  বড় বড় প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলেও মনের গহীনে সুপ্ত বাসনা ছিল ঢাবিকে নিয়েই। ঢাবিতে না হলে দেশেই থাকব না, এমন চিন্তাভাবনাও দানা বেঁধেছিলো মনে। আল্লাহপাকের অশেষ কৃপায় ঢাবির তিন ইউনিটসহ ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো পজিশন পেয়ে পেয়ে ঢাবির আনন্দ প্রথমদিকে কিছুটা কমই অনুভব করেছি। ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম, আমার আসলেই ঢাবিকে কতটুকু দরকার ছিল। 

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বিষয়ে ভর্তি হতে চান? 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। আমার ইচ্ছা আইন নিয়ে পড়ার। প্রথম কলে চয়েজ লিস্টের ২য় তে থাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পেয়েছি। আশা রাখছি ৩য় বা ৪র্থ কলে আইন পেতে পারি। তবে আমি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়তেও মানসিকভাবে প্রস্তুত। এটি মাল্টিডাইমেনশাল সাবজেক্ট, কোর্স প্ল্যান যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং।  

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন? 

ক্লাস এইটে আব্বা মারা যায়। এরপর থেকে জীবন খুব একটা মসৃণ থাকেনি। ১৩ বছর বয়সেই কাঁধে এসে পড়ে আব্বার ব্যবসার বিশাল ভার! শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। এরপর থেকে  এসএসসি পরীক্ষার ৩ মাস আগ পর্যন্ত কোনোরকমে পাশ করে করে এসেছি শুধু, কোনো পড়াশোনারই তেমন সুযোগ হয়নি। এসএসসির ৩ মাস আগে উপলব্ধি করলাম, আমি কিছু পারি না, আমি ফেল করব! ঠিক সেই মুহূর্তে নেওয়া আমার ডিসিশানটা জীবনের অন্যতম সেরা ডিসিশান হবে ভাবতে পারিনি। 

তিন মাস পুরোদমে ব্রেক নিলাম ব্যবসা থেকে। তখন দিনে ১৬-১৭ ঘণ্টাও পড়েছি। আমি মনে করি আমার এডমিশনের সফলতায়, তখনকার সেই স্ট্রাগল দারুণভাবে কাজ করেছে। এসএসসির পর আবারো ব্যবসায় ফিরলাম, উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষ পর্যন্ত আব্বার ব্যবসা দেখাশোনা করেছি। এরপর আবার ব্রেক নিয়ে এডমিশন যাত্রা শুরু। এই সময়টাতে আমি খুব বেশি যে পড়েছি এমন না, গড়ে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি পড়াই হয়নি, তবে যতটা সময় পড়েছি খুব আন্তরিকতার সাথে পড়েছি।  

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল? 

আমার আব্বা- আম্মার ইচ্ছা ছিল আমি ঢাবিতে পড়ব। আব্বা চলে গেলেও উনার চাওয়াটাকে পূরণ করাই ছিল আমার 
সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আর হতাশাগ্রস্ত হলে ভাবতাম, আম্মাকে নিয়ে কার্জনের সামনে ছবি তুলছি! এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আবার  নতুন উদ্যোমে পড়া শুরু করেছি। 

পরীক্ষার হলে কোন কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?

প্রথমে শতভাগ পারা প্রশ্নের উত্তর একটানা দিয়েছি। না পারা বা দ্বিধাগ্রস্ত প্রশ্নের সাইডে ছোট করে দাগ দিয়ে রেখেছি, পরে সেগুলো আবার ভালো করে দেখে এর মধ্যে থেকে আরো কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর করেছি। রিটেনের ক্ষেত্রে যেকোনো মূল্যে সম্পূর্ণ উত্তর লেখার চেষ্টা করেছি, এক্ষেত্রে সলিড মার্কের উত্তরগুলো আগে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। 

ভবিষ্যতে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

অ্যাডমিশনে ভালো করার মূলমন্ত্র কনসিস্টেন্সি। আমি যতটুকুই পড়ি না কেন, আমি প্রতিদিন পড়বো এমন মনোভাব থাকা উচিত। আর নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারব। অ্যাডমিশনে আমার স্ট্র‍্যাটেজির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  ব্যাসিকের ওপর জোর দেওয়া। ব্যাসিকই আপনার চান্স পাওয়া, না পাওয়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ও নিজের পড়াশোনার প্রতি আন্তরিক থাকলেই  ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। 


সর্বশেষ সংবাদ