আম্মা সবসময় বলতেন— ‘তুই যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারিস জজ হয়েছিস’

মোছা. আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী
মোছা. আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মোছা. আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মৃত বাবার স্বপ্ন পূরণেই বিচারক হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তার সাফল্য ও শিক্ষা জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৭তম বিজেএসসি পরীক্ষায় আপনিও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার জন্ম, শৈশবকাল সম্পর্কে জানতে চাই।

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: আমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় গোপীনাথপুর গ্রামে। আমার বেড়ে উঠা ও গ্রামীণ পরিবেশে। আমি এইচএসসি পর্যন্ত আমার গ্রামে পড়াশোনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রথম নিজের এলাকা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন তো আপনি সহকারী জজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। আপনার এ অনুভূতিটা সম্পর্কে বলুন।

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: আমি মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। সেই মুহূর্তটা আসলে অন্যরকম অনুভূতি। আম্মা সব সময় বলতো, ‘তুই যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে এসে বলতে পারিস যে তুই জজ হয়েছিস।’ আমার মায়ের এই স্বপ্ন পূরণ করার অনুভূতিটা আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা কে, কীভাবে এ স্বপ্নের শুরু হয়েছিল?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: বিচারক হওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টার কথা বলতে গেলে আমার মামার কথাই বলতে হয়। আমার মামা মো. কামাল উদ্দিন ভূইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা আদালত এবং হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট। মামাকে দেখে ছোট থেকেই আইন বিষয়ের প্রতি অনেক আগ্রহ তৈরি হয় এবং বিচারক হওয়ার ইচ্ছা জাগে আমার।

আরও পড়ুন: বাবা জজ কোর্টের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, বৈশাখী হলেন সহকারী জজ পরীক্ষায় অষ্টম

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: আমার বিচারক হওয়ার পেছনে আমার মা-বাবা, শ্বশুর- শাশুড়ি, স্বামী,  আমার শিক্ষকগণ এবং বন্ধুদের অবদান অনেক বেশি। তবে আমার মা-বাবার ত্যাগ ছিল অনেক বেশি। ছোট থেকে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে উনারা আমাকে কখনো সাহস হারাতে দেননি। আমার স্বপ্ন থেকে দূরে যেতে দেননি। এমনকি আমার বাবা উনার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চেয়েছেন আমি যেন ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাফল্যের পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: সফলতার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। তবে আমার মনে হয় নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া সফলতার পথটা মসৃণ করে দেয়। আরো একটি বিষয় জরুরি হলো স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হার না মানা, হতাশ না হওয়া। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এবং নিজের লক্ষ্য ঠিক করে পরিশ্রম করেছি, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে সম্মানিত করেছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, দিনে কত ঘণ্টা করে পড়ালেখা করেছেন?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: শিক্ষাজীবন থেকেই আমার বিজেএস প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। আমি শিক্ষাজীবন থেকেই সব ক্লাস নোট করে করে পড়তাম, যা আমার বিজেএস প্রস্তুতিতে বেশ কাজে দিয়েছে। আমার শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলতাম। পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি সব সময়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। আর সময়ের ব্যাপারটা  একেক জনের একেক রকম। সবাই যার যার মতো করে সময় কাজে লাগানো উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কতবার ভাইবা দিয়েছেন এবং কততম ভাইভাতে সফল হয়েছেন?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: আমি দুইবার ভাইবা দিয়েছিলাম। ১৬ তম বিজেএস ছিল আমার প্রথম চাকরির পরীক্ষা। ১৬ তম বিজেএস ভাইভায় অংশগ্রহণ করেছিলাম কিন্তু তখন উত্তীর্ণ হতে পারিনি। আল্লাহ তায়ালার কৃপায় ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছেড়ে রাবির আইনে ভর্তি, সহকারী জজ পরীক্ষায় সপ্তম

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে দেশের জন্য আপনি কি অবদান রাখতে চান?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: বিচার বিভাগে গিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। ‘আমার নিজের অনেক পরিচিত জনকে দেখেছি এক মামলা বছরের পর বছর চালাতে। আমি এই জায়গায় কাজ করতে চাই। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর জন্য কাজ করবো ইনশাআল্লাহ!’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইবার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, আপনি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: ভাইভায় ভালো করার জন্য একটা বিষয় সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হলো আত্মবিশ্বাস। ভাইভার জন্য প্রিলি, লিখিত পরীক্ষার জন্য যা পড়েছিলাম সেগুলো বার বার রিভিশন করেছি। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখেছিলাম। দেশের ইতিহাস, নিজ জেলা এই বিষয়গুলো নিয়ে খুঁটিনাটি পড়েছিলাম। ভাইভার জন্য শুধু পড়াশোনা যথেষ্ট নয়, আত্মবিশ্বাস রেখে ঠান্ডা মাথায় ওই সময়টা ওভারকাম করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence