প্রথম প্রিলিতে অকৃতকার্য, দ্বিতীয় চেষ্টায় বিজেএসে ৮ম ঢাবির মোত্তালেব

মোত্তালেব হোসেন
মোত্তালেব হোসেন  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস ১৫তম (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে মোত্তালেব হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি প্রথমবার  প্রিলিতে অকৃতকার্য  হলেও হতাশ হননি। ফলে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়েছেন। হয়েছে মেধাতালিকায় অষ্টম। সম্প্রতি তিনি তার সাফল্য ও শিক্ষা জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন- আমান উল্যাহ আলভী


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৫তম বিজেএস নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে আপনি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার জন্ম, শৈশবকাল সম্পর্কে জানতে চাই।
মোত্তালেব হোসেন: আমার জন্ম বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সিংজানী গ্রামে। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। খেংসর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে কুন্দারহাট ইনছান আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন তো আপনি সহকারী জজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। আপনার এ অনুভূতিটা সম্পর্কে বলুন।

মোত্তালেব হোসেন: আমার অনেক দিনের স্বপ্ন বিচারক হওয়া। এই স্বপ্ন নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হওয়া। বাবাকে অনেক মিস করেছি সহকারী জজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে। ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে বাবা মারা যান। উনার স্বপ্ন ছিল আমাকে এই পর্যন্ত দেখে যাবেন। কিন্তু দেখে যেতে পারলেন না। বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা কে, কীভাবে এ স্বপ্নের শুরু হয়েছিল?
মোত্তালেব হোসেন: বিচারক হওয়া স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল বাবার হাত ধরেই। বাবা সব সময় বলতো কখন হাকিম হবি তুই। গ্রামে বিচারকের বদলে হাকিম শব্দটা প্রচলিত আছে। আমার কলেজের একজন শিক্ষক ছিলেন মোস্তফা কামাল সরকার স্যার তিনি বিচারক হবার স্বপ্নটা বেশি পরিমাণে দেখান। তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন এবং পজেটিভ নেগেটিভ দিকগুলো বর্ণনা করে বুঝিয়েছেন। আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
মোত্তালেব হোসেন: বিচারক হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মায়ের। আমার ভালো-মন্দ সকল সময়ে মা ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন। একমাত্র আপু তাহমিনা আমাকে অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। সব রকম পরিস্থিতিতে মা আমাকে সাহস দিয়েছেন, মোটিভেইট করেছেন, দোয়া করেছেন। আমার জন্য শিক্ষকগণও দোয়া করেছেন। এছাড়াও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীকে পাশে পেয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাফল্যের পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?
মোত্তালেব হোসেন: জীবনে কিছু করার জন্য একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং সেই লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এই লক্ষ্যের মাঝখানে কোনো কিছুকে আনা যাবে না। এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই চিন্তা চেতনা এবং অগ্রসর হতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, দিনে কত ঘণ্টা করে পড়ালেখা করেছেন?
মোত্তালেব হোসেন: আমি প্রথমে গতবারের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পড়া শুরু করেছিলাম। পড়াশুনার ক্ষেত্রে আমি সময়টাকে ফোকাস না করে সবসময় পড়ার কোয়ালিটিটাকে ফোকাস করতাম। আমি যতটুকু পড়েছি ততটুকু যেন আমার মনে থাকে সেই চেষ্টা করতাম। আমি একটা রুটিন করে নিয়েছিলাম, কোনদিন কতটুকু পড়া শেষ করবো। সবসময় আমি রুটিন মাফিক পড়ার চেষ্টা করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কতবার ভাইভা দিয়েছেন এবং কততম ভাইভাতে সফল হয়েছেন?
মোত্তালেব হোসেন: আমার ১৪তম বিজেএস ছিল প্রথম পরীক্ষা। এ প্রিলিতে আমার ফেল আসে। ১৫ বিজেএস আমার প্রথম ভাইভা এবং প্রথম ভাইভাতে আমি সফল হয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা বিচারক হতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
মোত্তালেব হোসেন: যারা বিচারক হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলবো— বিচার বিভাগে কাজ করার এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। বিচার বিভাগে বিলাসিতার জায়গাটা কম। যারা বিলাসী জীবনযাপন করতে চান তাদের জন্য বিচার বিভাগ নয়। যারা ধৈর্য এবং পরিশ্রম দিয়ে কাজ করতে পারবেন তাদের জন্য বিচার বিভাগ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে দেশের জন্য আপনি কি অবদান রাখতে চান?
মোত্তালেব হোসেন: বর্তমানে বিচার বিভাগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামলা জট। প্রত্যেক মানুষেরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে যতটুকু পারা যায় মামলা সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোত্তালেব হোসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ