রাতারাতি বদলে গেল দিল্লি–ঢাকার কূটনৈতিক সমীকরণ

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা
বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা  © সংগৃহীত ছবি

এক রাতের ব্যবধানে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের চিত্র। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যেখানে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের আয়োজনে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব উদযাপনে ব্যস্ত ছিলেন ভারতীয় বর্তমান ও সাবেক কূটনীতিক, সামরিক কর্মকর্তা এবং থিংকট্যাংকের প্রতিনিধিরা, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার সকালে সেই রাষ্ট্রদূতকেই তলব করে একাধিক প্রতিবাদ জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার রাতে চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ককে ‘অর্গানিক রিলেশনশিপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ১ হাজার ৬৬৮ জন ভারতীয় সেনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের সম্পর্ককে পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা ও অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

ওই অনুষ্ঠানে ভারতের সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল রাকেশ কাপুর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ–মিয়ানমার বিভাগের প্রধান বি শ্যাম, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণিশংকর আইয়ার, ঢাকায় নিযুক্ত একাধিক সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন থিংকট্যাংক ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রদূত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ট্যাগও করেন।

কিন্তু রাত পোহাতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বুধবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (সাউথ ব্লক) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসকে ঘিরে ‘কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর’ সম্ভাব্য হুমকির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনীতিবিদের সাম্প্রতিক ভারত-বিরোধী বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে তার প্রতিবাদ জানানো হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী একটি ‘ভুল বয়ান’ তৈরির চেষ্টা করছে, যা ভারত সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়, এসব ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ তদন্ত করেনি এবং ভারতের সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যও শেয়ার করেনি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও রাষ্ট্রদূত তলবের ধারাবাহিকতায় এ ঘটনা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল না। এর আগে গত রোববার ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকেও তলব করেছিল বাংলাদেশ। সে সময় ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।

এ ছাড়া ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা, বিজয় দিবসে রাজধানীর একটি সড়কের নাম ফেলানী খাতুনের নামে রাখার সিদ্ধান্ত এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার মন্তব্য—সব মিলিয়েই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি।

সবশেষে ভারতের পক্ষ থেকে আবারও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে দেশটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।

একদিকে বিজয় দিবসের মৈত্রীপূর্ণ উদযাপন, অন্যদিকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কূটনৈতিক টানাপোড়েন—এই ঘটনাপ্রবাহই স্পষ্ট করে দিচ্ছে, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্ক এখনো স্বস্তির জায়গায় পৌঁছায়নি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!