আইডিয়ালের পরিচালনা কমিটির ষাটোর্ধ্ব সদস্যকে তালাক আলোচিত সেই ছাত্রীর

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল  © ফাইল ছবি

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির আলোচিত সেই ছাত্রী পরিচালনা কমিটির ষাটোর্ধ্ব সদস্যকে তালাক দিয়েছেন। রবিবার (১১ জুন) ঠাকুরগাঁওয়ের ষাটোর্ধ পাবলিকে হলফ নামা করে এই তালাক দেওয়া হয়।

এরপর তালাকের নোটিশ উল্লিখিত জিবি সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের গুলশানের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৫ মার্চ একই প্রক্রিয়ায় প্রথমে নোটারি করে পরে স্কুলের অদূরে বিজয়নগরের একটি কাজী অফিসে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। তখন এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।

দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্য কর্তৃক এভাবে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ের ঘটনায় ধিক্কার ও নিন্দার ঝড় এবং একই সাথে তখন ওই সদস্যের নামে মতিঝিল এলাকায় পোস্টারিং হয়। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, উল্লিখিত ছাত্রী আর বৃদ্ধ জিবি সদস্যের গলায় গাঁদা ফুলের যে মালা দেখা গেছে, সে রকম একটি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের গলায়ও ঝুলছিল বিয়ের সময়।

ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় শত শত রিসোর্ট আর পিকনিক স্পট থাকা সত্ত্বেও খন্দকার মুশতাকের বাগানবাড়িতে ১৮ মার্চ কলেজ ছাত্রীদের শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়। সেখানে তারা ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান বলে ছাত্রীরা জানিয়েছেন। তার এক সপ্তাহ পরই বিয়ের ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ এবং ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি এবং ছাত্রী ও বৃদ্ধকে দুপাশে রেখে অধ্যক্ষের ছবি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: অধ্যক্ষ-সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি, শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বিচার দাবি অভিভাবক ফোরামের

এমন ঘটনার পর সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ফোরাম পরিচালনা কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ওই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের নোংরা ছবি দিয়ে ব্ল্যাক-মেইল করে এবং ফুসলিয়ে-প্রলোভন দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করেছেন উল্লিখিত ব্যক্তি। তিনি সত্তরোর্ধ্ব এবং ছয়টি বিয়ে করেছেন এখন পর্যন্ত, কিন্তু কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।

বিয়ের হলফনামা অনুযায়ী, খন্দকার মুশতাক ও ছাত্রীটি একসঙ্গে চলার কারণে পরস্পরকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে বিয়ে করছেন। কাবিননামায় উসমান গণি ও রতন সরকার নামে দুপক্ষের দুজনের উকিলের নাম রয়েছে।

অন্যদিকে তালাকের হলফনামায় ওই ছাত্রী দাবি করেছেন, জিবি সদস্য হওয়ায় খন্দকার মুশতাক তাকে হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করতেন। গুলশানে তার নামে ফ্ল্যাট লিখে দেবেন বলেও ফুসলাতেন। কোমলমতি হওয়ায় প্রতারিত হয়ে বিয়ে করেছেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারেন, লোকটি নারী নির্যাতনকারী, নারী লোভী ও বিশ্বাসভঙ্গকারী। জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তিনি তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গত জুনে খন্দকার মুশতাক জানিয়েছিলেন, তারা বিয়ে করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো স্থিরচিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, ওগুলো বর্তমানে বানানো যায়। আর ভিডিও সম্পর্কে বলেছিলেন, যদি একটি মেয়ে দৌড়ে তার বুকে গিয়ে আছড়ে পড়ে, তাহলে তার ওপর যে জোরজবরদস্তি করা হয়নি-সেটাই প্রমাণিত হয়। অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশিদী যে তার সহপাঠী এই কথাও তিনি স্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর নামকরা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ, গতকাল সোমবার (১২ জুন) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে নানা-অনিয়ম জানিয়ে বিচারের দাবি জানায় অভিভাবক ফোরামের চেয়ারম্যান ফাহিম উদ্দিন আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী।

গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে তারা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ করে। এর মধ্যে আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষক নিয়োগে ভয়াবহ দুর্নীতি, অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য, বর্তমান গভর্নিং বডিতে খুনের মামলার চার্জ-শিটভুক্ত আসামী, ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনকারী, পরকীয়ায় সম্পৃক্ত শিক্ষিকা, বাগান বাড়িতে ছাত্রী সাপ্লাইয়ার ও দুর্নীতিবাজদের অবস্থানসহ নানা বিষয়ে জানিয়ে বিচার দাবি করা হয়।

এ নিয়ে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ