মানসিকভাবে অস্বস্তিকর সময় পার করছি: চঞ্চল চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরী
চঞ্চল চৌধুরী  © সংগৃহীত

জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে তার মায়ের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে নেটিজেনদের কেউ কেউ তার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেছে। যা নিয়ে গত কয়েকদিনে নেট দুনিয়া চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। তারকাদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এর প্রতিবাদ করেছেন। পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্যকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

তবে এ নিয়ে এতদিন চুপ ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। অবশেষে মুখ খুললেন, ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে বললেন নিজের কথা। জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ভালো নেই তিনি। বলেছেন, ‘বিষয়টি আমি শুধুই বিব্রত নই, সেই সাথে মানসিকভাবে খুব অস্বস্তিকর সময় পার করছি।’

ফেসবুক স্ট্যাটাসে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নিয়ে গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। এতে আমি শুধুই বিব্রত নই, সেই সাথে মানসিকভাবে খুব অস্বস্তিকর সময় পার করছি...। এখন নিশ্চয়ই আমার পরিচয় নিয়ে কারো কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে নতুন করে আমার পরিচয় জানার জন্য কেউ আগ্রহী হলে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ইনবক্স করলে ধন্য হবো। তবে পরিচয়ের নামে, এরকম পরিস্থিতি কাম্য নয়।

‘গুটি কতক মানুষ যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন, ধর্ম পরিচয় জানতে চাওয়াটা কি কোন অপরাধ? তাদের জন্য বলছি...। অপরাধ নয়, এটা যেমন ঠিক, আবার বার বার এই পরিচয়টা জানতে চাওয়ার মধ্যেও তেমন কোন বাহাদুরী বা পৌরুষত্ব নেই। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাকে ভালোবাসে,আমার কাজ পছন্দ করে, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।’

তিনি লিখেছেন, ‘‘এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যারা আমাকে ভালোবেসে আমার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন, সকল ধর্মের মানুষ আমার মাকে মা ডেকেছেন, আমার পরিচিত জন, শুভানুধ্যায়ী, সহকর্মীসহ, দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ খোঁজ নিয়েছেন, আমি এ হেন পরিস্থিতিতে কেমন আছি। তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

আর সামান্য সংখ্যক মানুষ নানান বিব্রতকর প্রশ্ন করে ও গালি গালাজ করে বা আমাকে বর্জন করেও, পরবর্তীতে তাদের কমেন্টগুলো ডিলিট করে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও আমার ভালোবাসা রইলো। কারণ তারা এক পর্যায়ে বাস্তব পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছেন। যে কারণে, অনেকেই পরবর্তীতে আমাকে দেয়া গালিগুলো আর খুঁজে না পেয়ে উল্টো অভিযোগ করেছেন, বলেছেন... কই আমার বিরুদ্ধে তো কেউ তেমন কিছুই লেখেনি.... এ নিয়েও আর কোন বিতর্কের দরকার নেই।

আপনাদের সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, এই বিষয়টাকে কেউ ধর্মীয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউই কাউকে অসম্মান করে কিছু লিখবেন না। পারলে গঠনমূলক কিছু লিখুন। সেটাই হবে সভ্য মানুষের কাজ।

শুধু একটি কথা সবাইকে বলতে চাই, আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, যে পেশারই হোন না কেন, আপনার কর্ম দিয়ে দেশের জন্য কত টুকু মঙ্গল করছেন, সেটাই আসল কথা। সব ধর্মেই ভালো মানুষ, মন্দ মানুষ রয়েছে। আমার মনে হয় সকল মানুষের পরিচয়টা কর্ম, সহনশীলতা, আর ধর্মীয় উদারতা দিয়ে হোক। আমাকে নিয়ে অতিসত্বর এই আলোচনারও পরিসমাপ্তি হোক।

আমার পরিচয় আমি মানুষ, আমি বাংলাদেশী, আমি বাঙালী। আর ধর্ম পরিচয়টা প্রত্যেকের মতই জন্মগত। এতে কারো কোন আপত্তি থাকলেও, আমার কোন সমস্যা নেই। আর সবচেয়ে বড় যে পরিচয়ে আপনারা আমাকে চেনেন সেটা হলো, আমি একজন শিল্পী। আমার কাছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান সবাই সমান এবং আপন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক। সারা পৃথিবী জুড়ে যে করোনা সংকট চলছে, এই দু:সময়ে সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। আসুন, আমরা অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই। মানবতার জয় হোক। সবার জন্য ভালোবাসা।’’


সর্বশেষ সংবাদ