যৌনকর্মীর চরিত্রে ‘সমালোচিত’ সেই ম্যাডিসনই হলেন অস্কারে সেরা অভিনেত্রী

মাইকি ম্যাডিসন
মাইকি ম্যাডিসন  © সৌজন্যেপ্রাপ্ত

কদিন ধরে সবার মুখে মুখে ছিল অভিনেত্রী ডেমি মুরের নাম; বলা হচ্ছিল ‘গোল্ডেন গ্লোব’ জেতা মুর এবার অস্কারে ফিরছেন ফেরার মত। কিন্তু জরিপ, জল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে ডেমি মুর, সিনথিয়া আরিভো, কার্লা সোফিয়া গ্যাসকোনের মত অভিনেত্রীদের টেক্কা দিয়ে এবার অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী মাইকি ম্যাডিসন।

ম্যাডিসন পুরস্কার জিতেছেন ‘আনোরা’ সিনেমার জন্য। যিনি ‘আনোরায়’ যৌনকর্মীর চরিত্র করেছেন এবং সিনেমার কিছু দৃশ্যের জন্য হয়েছেন সমালোচিতও।

প্রেম, নারীর সামাজিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক সংঘাতের প্রতিচ্ছবির সিনেমা ‘আনোরা’ জিতে নিয়েছে সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেত্রী, মৌলিক চিত্রনাট্য এবং সেরা সম্পাদনাসহ মোট পাঁচটি অস্কার।

ভ্যারাইটি লিখেছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে রবিবার সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯৭তম আসরে এক হাতে পুরস্কার এবং অন্য হাতে ছোট্ট একটি কাগজের টুকরো হাতে নিয়ে, মঞ্চে মাইক্রোফোনের সামনে যখন হাজির হন ম্যাডিসন, তখন তা চোখে অশ্রু, ধরে এসেছিল গলা। তিনি বললেন, “এটি পরাবাস্তব, যা ঘটছে তা পরাবাস্তব।”

লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় হওয়া ম্যাডিসনের কাছে হলিউড সব সময় দূরের কিছু মনে হত বলে জানিয়েছেন ম্যাডিসন। তিনি আরও বললেন, “তাই এখানে, এই হলরুমে দাঁড়িয়ে থাকা অবিশ্বাস্য।”

এরপর কাগজের টুকরোয় লেখা নাম পড়তে থাকেন তিনি, যারা সবাই ‘আনোরার’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট । তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যাকাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখে ম্যাডিসন বলেন, “যৌন সম্প্রদায়ের প্রতি স্বীকৃতি ও সম্মান চেয়েছিলাম। আমি তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলছি, তাদের পাশে আছি। ওই সম্প্রদায়ের যেসব নারীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তারা এই অর্জনের ভাগীদার।”

‘আনোরা’ অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল ছয় শাখায়। আর সেরা অভিনেত্রীর তালিকায় ছিলেন ম্যাডিসনের সঙ্গে ছিলেন, ‘উইকেড’ সিনেমার সিনথিয়া আরিভো, ‘এমিলিয়া পেরেজের’ কার্লা সোভিয়া গ্ল্যাসকোন, ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমার ডেমি মুর এবং ‘আই অ্যাম স্টিল হেয়ারের’ ফার্নান্দা তোরেসে।

কুখ্যাত রাশিয়ান গ্যাংস্টারের ছেলে এক যৌনকর্মীর প্রেমে পড়ে। দুজন বিয়ে করে; কিন্তু সেই গ্যাংস্টার বিয়ে মেনে নেয় না। এমন গল্প নিয়ে শন বেকারের সিনেমা ‘আনোরা’। গত বছর কান উৎসবে স্বর্ণপাম জেতা সিনেমাটি আদতে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের বাস্তবতা আর তাদের স্বপ্নের টানাপোড়েনের গল্প।

নিউইয়র্কের ব্রুকলিন সিনেমাটির প্রেক্ষাপট। সেখানে রাশিয়া থেকে আসা অনেক মানুষ বসবাস করেন। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুটিংয়ের কয়েক মাস আগে ব্রুকলিনে যেয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন ম্যাডিসন।

তারপর তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয়দের লক্ষ্য করা। তাদের জীবনযাত্রা, চলাফেরা, খাদ্যাভাস, কথা বলার উচ্চরণ দেখতেন ম্যাডিসন। প্রায় প্রতিদিন স্থানীয় দোকান, মার্কেট, রেস্তোরাঁয় অভিনেত্রী সময় কাটিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

শন বেকার ‘আনোরা’ সিনেমায় প্রচুন যৌনদৃশ্য রেখেছেন। সিনেমায় ম্যাডিসন হয়েছেন একজন যৌনকর্মী, যার সম্পর্ক হয় রাশিয়ান এক বিলিওনিয়ারের ছেলের সঙ্গে। সিনেমার যৌনদৃশ্যের দৃশ্যধারণের সময় সাধারণ প্রশিক্ষিতদের সঙ্গে রাখা হয়, যারা অভিনয়শিল্পীদের অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয়ে সহজ হতে সহযোগিতা করেন।

তাদের বলা হয় ‘ইন্টিমেসি কো-অর্ডিনেটর’। ‘আনোরার’ ওই ধরনের দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় ম্যাডিসন কোনো ‘ইন্টিমেসি কো-অর্ডিনেটর’ রাখেননি বলে জানিয়েছেন।

‘আমি সবটা একাই সামাল দিয়েছি’, বলেছিলেন ম্যাডিসন। তার এই মন্তব্যের সমালোচনা এসেছে। তরুণী অভিনেত্রীকে নিয়ে সমালোচকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে অস্কার দৌড়ে তিনি কতটুকু এগুতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল।

তবে সব সমালোচনায় ও সংশয়ে সিলমোহর দিয়ে ‘আনোরাই’ কেবল জেতেনি, জিতে গেছেন বেকার ও তরুণ অভিনেত্রী ম্যাডিসনও।


সর্বশেষ সংবাদ