শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানববন্ধন
এবার ‘দখলের আশঙ্কা’য় মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৫ PM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৫ PM
রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রবিবার (২০ আগস্ট) গুলশানে শিক্ষালয়টির ক্যাম্পাসের সামনে তারা এই মানববন্ধন করেন।
গত ১৭ আগস্ট সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশি মাধ্যমের পাঠ্যক্রমে পরিচালিত মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আগামী বুধবার একটি সভার আহ্বান করা হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিএমপি, সচিবালয়, শিক্ষাবোর্ড, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সরকার এর আগে এরূপ একটি সভা ডেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছিল। ফলে এবার এ প্রতিষ্ঠানটিও দখল হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন এখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের দাবি, মানারাত একটি পরিচ্ছন্ন ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তারপরও এ ধরনের বৈঠকের মধ্যে অভিভাবকরা মানারাত ইউনিভার্সিটির মতো করে দখলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তাই এর প্রতিবাদে অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা দাবি করেন, মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজটিকে নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে হাজার হাজার স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রতিষ্ঠানটি একটি সুন্দর কারিকুলামে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা দাবি করেন বিদ্যমান কারিকুলামে ইসলামি ধারার শিক্ষার যে পদ্ধতি চালু রয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, মানারাতে আধুনিক ও যুগোপযোগী ব্রিটিশ শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার ধারা আছে। সেজন্যেই আমরা আমাদের সন্তানদের এই স্কুলে দিয়েছি। পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষার যে ধারা আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখানে জড়ো হয়েছি।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের অন্যান্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তুলনায় মানারাতে ভালো শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাদের সন্তানদের এই স্কুলে দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, এখানে ইংরেজির পাশাপাশি দেশপ্রেম, দেশকে ভালোবাসা, একইসঙ্গে ইসলামি শিক্ষাও সে পাবে—যা সবসময় হয়ে আসছিল।
অভিভাবকরা বলেন, মানারাতে যেভাবে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, বাংলাদেশের দিবসগুলোকে তুলে ধরা হয় তা অনেক বাংলা মাধ্যম স্কুলেও তুলে ধরা হয় না। অথচ এই স্কুলটিকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারা আরও বলেছেন অতীতে এই স্কুলটিকে দখল করার জন্য কয়েকবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু যখনই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, মাঠ দখলের চেষ্টা করা হয়েছে তখনই স্কুলটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ন্যায় আশা জানিয়ে বলেছেন, আজকে যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ষড়যন্ত্রে হস্তক্ষেপ করেন তাহলে তারা কার দিকে তাকাবেন?
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা কোনো পরিবর্তন চাই না।আমরা ভালোভাবে বেড়ে উঠছি। আমরা মানারাতকে ভালোবাসি। আমরা মুক্ত পরিবেশে ভালোভাবে বড় হচ্ছি। মানারাত একটি ইংলিশ মিডিয়াম। স্কুলটির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না।
মানববন্ধনে থাকা কুলসুম বেগম নামের এক অভিভাবক জানিয়েছেন, মানারাত ট্রাস্টি বোর্ড যারা আছেন তারা দেশের সর্বোত্তম ভালো মানুষ। সেখানে সরকারের সাবেক সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় গণ্যমান্য শিক্ষকরা আছেন। তারা তাদের জীবনে ন্যূনতম দুর্নীতির সাথে আপোষ করেননি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনোই অনিয়মের কোন অভিযোগ আমরা দেখিনি। তাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লক্ষ্যে তাদের বাদ দিয়ে যে মিটিং হচ্ছে আমরা মনে করি এটা ঠিক হয়নি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাদেরকে রেখে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল।
মানববন্ধনে থাকা সাবিনা নামের আরেক অভিভাবক বলেন, একটার পর একটা ভালো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হচ্ছে। এর আগে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট দখল করা হয়েছে। সভ্য সমাজে এভাবে ট্রাস্ট দখল চলতে দেয়া যায় না। চলা উচিত না। তাছাড়া এর মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষিত এবং সুশীল সমাজকে অপমানিত করা হয়।