২৩ দিন ধরে বাসায় বসে অফিস করছেন শাবিপ্রবি উপাচার্য

উপাচার্য ভবন
উপাচার্য ভবন  © টিডিসি ফটো

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এখন শান্ত। দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে কঠোর আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে তারা। বলা যায় ক্যাম্পাসে এখন শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে এমন পরিস্থিতেও উপাচার্য ভবনের বাইরে আসতে দেখা যায়নি শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। গত ২৩ দিন যাবত তিনি তার বাস ভবনের ভেতরেই আছেন। বলা যায় অনেকটা স্বেচ্চায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন।

আরও পড়ুন: চবির আশায় কোথাও ভর্তি হননি ফাহিমা, জিনাতুলের কৃতজ্ঞতা

জানা যায়, বাসায় থেকেই অফিস করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। আন্দোলন বন্ধের পর গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খোলা হলেও নিজ কার্যালয়ে আসেননি তিনি। এমনকি আন্দোলনের পর ১৬ জানুয়ারি থেকে এখনো বাসা থেকে বের হননি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ। বাসা থেকেই পরিচালনা করছেন অফিস কার্যক্রম।

বাসা থেকে ভিসির অফিস করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভিসি বাসায়ই আছেন। এখনো অফিসে আসেন নি। জরুরি কোনো ফাইল আসলে ওনার বাসায় পাঠানো হয়।

সংঘর্ষ, মিছিল, বিক্ষোভ আর উত্তেজনায় ক্যাম্পাস উত্তাল ছিল ১৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। অনশন ভাঙার পর থেকে বদলে গেছে ক্যাম্পাসের চিত্র। কমেছে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। টানা ১৪ দিনের আন্দোলন-ঝড় শেষে শান্ত হয়েছে শাবিপ্রবি। তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আলপনা, ক্যাম্পাস পরিষ্কার, চাষাভুষার টং স্থাপন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।

অনশন ভাঙ্গার পর গুঞ্জন উঠেছিলো এক সপ্তাহের মধ্য প্রজ্ঞাপন জারি করে শাবিপ্রবিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। শাবিপ্রবি থেকেই কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। বেশ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও শুনা গিয়েছিলো। কিন্তু সপ্তাহ গড়ালেও উপাচার্যকে অপসারনের কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। বরং বহাল তবিয়তে বাসা থেকেই অফিস করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি রাতে সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রীরা। পরের দিন দাবি মেনে নেয়ার কথা দিলেও তা পূরণ করেননি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ। দাবি পূরণে সময় চাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যায় ছাত্রীরা। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হন ছাত্ররাও। ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা চালালে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পরেরদিন ভিসিকে আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তালা ভেঙে ভিসিকে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ভিসি পদত্যাগে সময় বেধে দিয়ে গণ অনশনে বসে শিক্ষার্থীরা। ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা।

আরও পড়ুন: ক্ষুদা, দারিদ্র, অবহেলার সাথে লড়ে শিউলি ফুটলো ডাক্তার হয়ে

এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে যান। দ্রুত দাবি মেনে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। দাবি মানা না হলে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিও শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আভাস দেন।


সর্বশেষ সংবাদ