সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ভিসি অধ্যাপক ফরিদ

ভিসির বাসভবন
ভিসির বাসভবন  © সংগৃহীত

ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। বন্ধ রয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়াও স্থগিত রয়েছে। এমন গুমোট অবস্থা থেকে ফিরতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এদিকে আন্দোলনের পর অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। নিজ বাসভবন ছেড়ে এখনো বের হননি তিনি।

১৩ জানুয়ারি রাতে সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রীরা। পরের দিন দাবি মেনে নেয়ার কথা দিলেও তা পূরণ করেননি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ। দাবি পূরণে সময় চাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যায় ছাত্রীরা। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হন ছাত্ররাও। ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা চালালে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পরেরদিন ভিসিকে আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তালা ভেঙে ভিসিকে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে প্রায় অর্ধ  শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ভিসি পদত্যাগে সময় বেধে দিয়ে গণ অনশনে বসে শিক্ষার্থীরা। ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা।

আরও পড়ুন- শাবিপ্রবি উপাচার্যকে সরানো হচ্ছে 

এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে যান। দ্রুত দাবি মেনে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। দাবি মানা না হলে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিও শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আভাস দেন।

অনশন ও ভিসির বাসভবনের সামনে থেকে সরলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ভবনের তালা খুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেদিন কয়েকজন কর্মকর্তা অফিসে আসলেও বেশির ভাগই অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। দুইদিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আগামীকাল আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো খুলবে।

আরও পড়ুন- দ্বিতীয় মেয়াদে কাউকে ভিসি নিয়োগ না দেওয়ার সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনের শুরুর দিকে নির্ভারই ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ। শিক্ষার্থীরা এতো কঠোর অবস্থানে যাবেন ভাবেন নি তিনি। অনশন শুরু করার পর টেনশনে পড়েন ভিসি। পক্ষের শিক্ষকদের কয়েকদফায় পাঠিয়েও শিক্ষার্থীদের মন গলাতে পারেননি। পরে আওয়ামী লীগের নিকটজন ও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সমাধান বের করতে পারেন নি। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিবাদ এবং পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতি থেকে যখন পদত্যাগের দাবি করা হয় তখন হাল ছেড়ে দেন অধ্যাপক ফরিদ। বর্তমানে তিনি সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানান শিক্ষকরা। অফিসগুলো খুললেও বৃহস্পতিবার অফিস করেননি ভিসি।

শিক্ষকরা আরও জানান, অধ্যাপক ফরিদ হার্টের রোগী। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় করোনার সংক্রমণও বেড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত তিনি বাসা থেকে বের নাও হতে পারেন। তবে ভিসির বাসভবনে কারোই প্রবেশে এখন বাঁধা নাই। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার সরকারের ইঙ্গিতে অনেক শিক্ষক এখন ভিসিকে এড়িয়ে চলছেন বলেও জানান তারা।

এসব বিষয়ে জানতে বারবার কল দেয়া হলেও রিসিভ করেননি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।


সর্বশেষ সংবাদ