দৃশ্যমান হচ্ছে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস
- তৌফিকুল ইসলাম আশিক, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি
- প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৫ AM , আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৩ AM

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানাধীন হামিদচরে কর্ণফুলী নদীর তীরে ১০৬ দশমিক ৬৬ একর জমিতে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’র স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস।
জমি অধিগ্রহণ: কাগজে কলমে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৯ সালে। এর মাঝে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর দফায় দফায় বালু ভরাটের পর গত ৪ মার্চ স্থায়ী ক্যাম্পাসের পূর্ত কাজ শুরু হয়।
আরডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের বাজেট ১ হাজার ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মেয়াদকাল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন। এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৯টি ভবনের মধ্যে ১৭টির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অন্য দু’টি টেন্ডারের অপেক্ষায়।
টেন্ডার হওয়া ১৭টি কাজের মধ্যে রয়েছে দুই একাডেমিক ভবন (৬ তলা), গ্রীন বাউন্ডারী ওয়াল (২২৯৩.৫ মি.), শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরী (১০ তলা), রেস্ট হাউজ (৪ তলা), রাস্তা মেকাডাম ৩ হাজার ৭০০ মিটার, ছাত্রী হল (৬ তলা), স্টাফ ডরমিটরী (৬ তলা), শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসভবন (১০ তলা), যানবাহন শেড (৩ তলা), ৫ টিসিকিউরিটি চেকপোস্ট, স্টাফ কোয়ার্টার (১২ তলা), মসজিদ (৩ তলা), এক্সটার্নাল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা (পিডিবি থেকে সংযোগ গ্রহণ), উপাচার্যের বাসভবন (৩ তলা), ৩টি পাওয়ার স্টেশন ভবন, প্রশাসনিক ভবন (৬ তলা) ও ওয়াসা থেকে সংযোগ গ্রহণ। এছাড়া ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্র হলসহ অন্যান্য কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ছাত্রী হল: বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসের ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্র হলে ৫২০ জন ও ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হলে ৩৬০ জন শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবে। হলগুলোতে বিভিন্ন আধুনিক সুবিধা থাকবে।
শিক্ষক ডরমিটরি: স্থায়ী ক্যাম্পাসে ব্যাচেলর এবং পরিবার ব্যতীত অবস্থানকৃত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট একটি ডরমিটরি থাকবে। যেখানে ১০৮ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা আবাসন সুবিধা পাবেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তা বাসভবন: সপরিবারে বসবাসের জন্য ৩৬টি পরিবার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি ১০ তলা বিশিষ্ট বি/সি টাইপ শিক্ষক শিক্ষক কর্মকর্তা বাসভবন নির্মাণাধীন রয়েছে।
স্টাফ ডরমিটরি: ব্যাচেলর এবং পরিবার ব্যতীত অবস্থানকৃত কর্মচারীদের জন্য থাকবে ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ডরমিটরি। এতে ১২২ জন কর্মচারী আবাসন সুবিধা পাবেন। এছাড়া ৪৬টি পরিবারের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১২ তলাবিশিষ্ট একটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মিত হচ্ছে।
মসজিদ: প্রথম পর্যায়ে ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে একটি তিন তলা মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ৪ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ মসজিদে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই থাকবে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা।
রেস্ট হাউজ: স্থায়ী ক্যাম্পাসে দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য অতিথি ও অন্যান্যদের বসবাসের জন্য নির্মিত হচ্ছে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজ।
যানবাহন শেড: বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন পার্কিং ও গাড়িচালকদের আবাসনের জন্য ৩ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসন শেড তৈরি হচ্ছে, যেখানে কমপক্ষে ৮৮টি গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে।
অ্যাকাডেমিক সার্কেল: মেরিটাইম শিক্ষার হাব হিসেবে একটি একাডেমিক সার্কেল টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেখানে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত টিএসসি, অডিটোরিয়াম, মেরিটাইম মিউজিয়াম, অ্যাকুয়ারিয়াম, ক্লাবরুমসহ নানা ধরনের সুবিধা থাকবে।
ইউজিসি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার এক বৈঠকে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কমডোর মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, দ্রুতগতিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। যোগ্য ঠিকাদার না পাওয়ায় মাঝে মাঝে রি-টেন্ডারিংয়ে যাওয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আশা করছি, ২০২৬ সালের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: হয় অর্থ বরাদ্দ দিন, না হয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করুন: রবি উপাচার্য
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে স্থায়ী ক্যাম্পাসের ১৭টি কাজ দুই শিফটে চলমান রয়েছে। দিন-রাত সব সময় কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ভৌত অবস্থা দৃশ্যমান হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে সবগুলো কাজ পরীক্ষিত ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থানান্তরিত হতে পারব।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি মিরপুরে দু’টি ভাড়া ভবনে ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি জানিয়েছন শিক্ষার্থীরা।