ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চান না বুয়েটের শিক্ষকরাও

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে তোলা।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে তোলা।  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখাসহ বেশ কিছু দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করছেন উচ্চশিক্ষালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২৯ মার্চ) থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দাবি বাস্তবায়নে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকেই বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ছিল প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও। এবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষকরাও।

সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না রাখার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা জানিয়েছেন। তারা লিখেছেন— ‘আমি বুয়েটে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।’

‘আশা করি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, এবং আদালত ও বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে আইনগতভাবে বিষয়টির সুরাহা করবে।’ ফেইসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন বুয়েটের ১৪ এবং ১৭ ব্যাচের ইইই বিভাগের শিক্ষক বিজয় শিকদার এবং এজাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকাডেমিক সময়সূচি অনুযায়ী এখন উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার-ভিত্তিক চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বর্জনের কারণে এসব পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি উচ্চশিক্ষালয় কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন সপ্তাহ পেরোলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরানো যায়নি শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চান না, লিখিত জানালেন বুয়েটের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী

এর আগে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৭টায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এদিন তারা দাবি বাস্তবায়নে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

রবিবার সকালে বুয়েটের আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত থাকলে দাবি আদায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সেটাও তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের সার্বিক অবস্থান জানান দিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। এদিন দুপুরের পরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছর বুয়েট শিক্ষার্থীদের পদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা তৈরি হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পুরোনো বিজ্ঞপ্তিটি আবার ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়।

আরও পড়ুন: নিয়মিত এক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই অংশ নেননি বুয়েটের পরীক্ষায়

গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি বুয়েট প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে “বহিরাগতদের” প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন।

ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, হলের সিট বাতিলসহ তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারেরও দাবি শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যাও চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। এসব দাবি আদায়ে শনি ও রবিবারের (৩০ ও ৩১ মার্চ) পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ