যবিপ্রবির একমাত্র ক্যাফেটেরিয়ার বেহাল দশা, দেখার কেউ নেই

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার খাবার খান শিক্ষার্থীরা
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার খাবার খান শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

নানা সমস্যায় জর্জরিত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া। একযুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার পরিবেশ গড়ে উঠেনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। মানসম্পন্ন খাবারের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, নিরাপদ খাবার পানি ও স্যানিটেশনের অভাবসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। শিক্ষার্থীরা একরকম স্বাস্থ্যঝুকি নিয়েই খাচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ার অস্বাস্থ্যকর খাবার। এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি সমাধান।

ক্যাফেটেরিয়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে কোন ধরণের সুরক্ষা ছাড়াই রান্না করছে ক্যাফেটেরিয়ার কর্মীরা। রান্নাঘরের কোন খাবার-ই ঢাকা নেই, পাশাপাশি খাবার ও ময়দার খামির উপর ভনভন করে উড়ে বেড়াচ্ছে মাছি। রান্নাঘরের বেসিন একই পানিতে ধোঁয়া হচ্ছে তরকারি ও থালাবাসন। এমন খাবারই শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে খাবার পানির ফিল্টারে ময়লা জমে কালো রং ধারণ করেছে। নেই হাত ধোয়ায় কোন জায়গা। টয়লেটের দুর্গন্ধে ওয়াশরুমের আশেপাশের যাওয়াও দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ায় নেই কোন নির্ধারিত মূল্য তালিকা, নেই পর্যাপ্ত টেবিল-চেয়ার, হাতেগোনা কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া সবগুলোই নষ্ট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার ওয়াশরুমের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অভিযোগ অনেক পুরোনো। ওয়াশরুমের বর্তমান কিছু স্থিরচিত্র আছে, সেগুলো ফেসবুক পেজ বা গ্রুপগুলোতে এক্সপোজ করতে রুচিতে বাঁধে৷ বেসিনের ট্যাপ নষ্ট, লাইট নষ্ট, পানি জমে থাকে। আর টয়লেটগুলো কখনই পরিষ্কার করা হয় না। ফলে টয়লেটের দুর্গন্ধ ক্যাফেটেরিয়ার মধ্যেও চলে আসে। ছাত্রছাত্রীরা যবিপ্রবির বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এ ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছিলো। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খাবারের মান বিবেচনায় ক্যাফেটেরিয়া থেকে ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলগুলোতে একই দামে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়ায়। সেখানকার পরিবেশও এখান থেকে অনেক ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা অতিথিদের ক্যাফেটেরিয়ায় নিয়ে বসাতেও বিব্রত বোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এজন্য তারা সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের হোটেলগুলোতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন।

এ ব্যাপারে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম ও মানের কথা চিন্তা করলে আমার কাছে ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলে খাবারের মান ও দাম দুটোই ভালো। এখানে খাবারের মূল্য তালিকা যেটা দেওয়া সেগুলো পাওয়া যায় না। এছাড়া বাইরে থেকে যদি একজন গেস্ট আসে, ফ্রেশ হওয়ার জন্য তাকে ক্যাফেটেরিয়ার আশপাশে নেওয়াও সম্মানে লাগে। এত বাজে অবস্থা, কেউ গেলে বমি করে ফেলবে। এসব নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনতো কোনো নজর দেয় না।

এদিকে ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা নাস্তা করতে বা একটু সময় কাটাতে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে থাকেন। ক্যাফেটেরিয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ফলে অনেক শিক্ষার্থী এখানে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে না পারতে কিছু শিক্ষার্থী ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খেয়ে থাকেন। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারের ফলে অনেকে ‘ফুড পয়েজনিং’ জনিত সমস্যায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে ক্যাফেটেরিয়ার খাবার তৈরি, পরিবেশন ও পরিবেশের যে ছবি ও ভিডিও দেখেছি। সেসব খাবার খেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রোগ যেমন-পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, পেটে গ্যাস, মাথা ব্যথা, ফুড পয়জনিং, কিডনি অকেজো ও লিভারের জটিলতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, খবার উন্মুক্ত রাখা ও মাছি বসার কারণে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু যেমন বেসিলাস, ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনম, সাল্মোনেলা, ইকোলাই, লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিন, শিগেলা, নরোভাইরাস ও প্যারাসাইট বা পরজীবীসহ প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস খাবারে বংশবিস্তার করে। এমনকি এটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে ব্যহত করতে পারে।

এ বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার শাহিদুর ইসলাম বলেন, টয়লেট সংস্কার ও পরিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মহাজন চিঠি দিয়েছে। চাইনিজ খাবারের মূল্যতালিকা থাকলেও (যা ক্যাফেটেরিয়ায় পাওয়া যায় না) সাধারণ খাবারের তালিকা না থাকাটা দুঃখজনক। সাধারণ খাবারের মূল্যতালিকা সংযোজন ও পানির ফিল্টার লাগানোর জন্য মহাজনকে বলেছি। আর খাবার সব সময় ঢেকে রাখা সম্ভব নয়, তবুও আমরা চেষ্টা করছি খাবার ঢেকে রাখার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবুও আমি বিভিন্ন সময়ে নিজে গিয়ে ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করে দেখেছি। সেখানের অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। খুব শীঘ্রই ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে যিনি রয়েছে তাকে সরানো হবে। ক্যাফেটেরিয়াকে খুব দ্রুত আধুনিকায়ন করা হবে যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর পরিবেশ পায়।


সর্বশেষ সংবাদ