উচ্চশিক্ষায় যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে নোবিপ্রবিতে

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

২০০৬ সালের ২২ জুন দেশের ২২তম পাবলিক এবং ৫ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ২৮টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিস্তারিত তথ্য।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাপুর-সুবর্ণচর সড়কের পাশে ১০১ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর সবুজের সমারোহ, বিশালাকার নীল দিঘী যে কাউকে মুগ্ধ করবে। বিশেষত দু’পাশে সারি সারি ঝাউগাছে মোড়ানো লন্ডন রোডটিকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ধারক। এছাড়া ছয় ঋতুতেও পৃথক পৃথক রূপে সাজে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শরতে কাশফুলের আগমনে শুভ্র হয়ে ওঠে সমগ্র ক্যাম্পাস আবার শীতে ক্যাম্পাসজুড়ে থাকে অতিথি পাথির আনাগোনা। বিবি খাদিজা হল সংলগ্ন লেকে এবং সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সংলগ্ন পুকুরে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখির আনাগোনা চোখে পড়ে।

অনুষদ ও বিভাগ:  নোবিপ্রবিতে  ৬টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউটের অধীনে মোট ৩০টি বিভাগ রয়েছে। ৩০ টি বিভাগ হল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এপ্লায়েড ম্যাথম্যাটিকস, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিসংখ্যান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং,  ফার্মেসি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স,  ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, কৃষি, ওশানোগ্রাফি, জুয়োলজি, অর্থনীতি, বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ, ইংরেজি, বাংলা, সমাজবিজ্ঞান,  সমাজকর্ম, ব্যবসায় প্রশাসন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা প্রশাসন এবং ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট।

আসন সংখ্যা: ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করলেও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট মোট ১ হাজার ৩৯১টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য ৬৯৪ টি এবং বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ২৭২ টি আসন রয়েছে।

শিক্ষক সংখ্যা: যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিতে সবচেয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকগণ। কিন্তু বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সেশনজটসহ বিভিন্ন সমস্যা মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছে নোবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১;১৯। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোবিপ্রবিতে বর্তমানে মোট ৩৩৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ২০ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৪২ জন, সহকারী অধ্যাপক ২০৪ জন এবং প্রভাষক ৭০ জন।

একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা: বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে  ৫ তলা ও ১০ তলা বিশিষ্ট দুইটি একাডেমিক ভবন, ৪ তলা বিশিষ্ট আধুনিক লাইব্রেরি ভবন এবং ৫ তলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস ভবন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত নতুন বিভাগসমূহে কিছু সংকট থাকলেও ২০১৫ এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব বিভাগই প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।

ল্যাব সুবিধা: ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান অনুষদভূক্ত বিভাগসমূহের জন্য ল্যাব সুবিধা অপরিহার্য হলেও দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী নোবিপ্রবির প্রায় প্রতিটি বিভাগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব রয়েছে এবং এই ল্যাব সুবিধার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়মিতই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।

আবাসন সুবিধা: বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে মোট ৫ টি হল রয়েছে। এদের মধ্যে ছেলেদের জন্য রয়েছে  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল, সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল হল এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে বিবি খাদিজা হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব হল। তবে প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১৭ বছর পার হলেও এখনও শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। আবাসন সংকটের কারণে সাধারণত প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের হলে সিট প্রদান করা হয় না।

গবেষণায় সাফল্য: সম্প্রতি এশিয়ার সেরা গবেষক নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম। বিজ্ঞানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেন। ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিং-২০২৩ অনুযয়ীও গবেষণায় দেশের দ্বিতীয় সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নোবিপ্রবি। করোনা পরবর্তী সময়ে নোবিপ্রবি ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে ১০০টি করোনাভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচন কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের কোভিড-১৯ আইসোলেশন সেন্টারের নর্দমা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শৌচাগারের সঞ্চালন লাইন থেকে মোট ১৬ বার বর্জ্য পানির নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পান গবেষক দল। এছাড়া, সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাফল্য: গণিত অলিম্পিয়াড, বাজেট অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সুনাম অর্জন করেছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা, বিদেশে স্কলারশিপ অর্জনেও সাফল্যের সাক্ষর রাখছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন নতুন ৫টি অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কারে সফলতা অর্জন করেন। বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুবোধ কুমার সরকার জাপানের হিরোশাকি ইউনিভারসিটি অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক বিখ্যাত প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকির সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম তিন ধরনের কালো রসুন উদ্ভাবন করেন।

সহশিক্ষা কার্যক্রম: পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি, মডেল ইউনাইটেড নেশন্স, কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ, বিজনেস ক্লাব, ফিমস ক্যারিয়ার ক্লাব, ইকো ক্লাব, সিএসটিই ক্লাব, লুমিনারি, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, শব্দকুটির, অভিযাত্রিক ব্লাড ব্যাংক, এনএসটিইউ ব্লাড ডোনার সোসাইটি, নোবিপ্রবি থিয়েটার ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


সর্বশেষ সংবাদ