নীতিমালার মারপ্যাঁচে অ্যাওয়ার্ড বঞ্চিত মাভাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০২:৩৫ PM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১০:১৫ PM
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) তৃতীয় সমাবর্তনে অ্যাওয়ার্ড কমানোর অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল রবিবার (০৫ মার্চ) অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে এবার দুই জনকে চ্যান্সেলর এবং তিন জনকে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ডিনস অ্যাওয়ার্ডও।
বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফান্ড সংকটের কারণ দেখিয়ে এমনটি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কৃতি শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার দাবিতে ভাইস চ্যান্সেলরের (উপাচার্য) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। তবে এতে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পদক প্রদান নীতিমালা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে ৩.৯৮ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিএসসি (অনার্স/ইঞ্জি.)/বিবিএ/বিএসএস (অনার্স)/ বিফার্ম প্রফেশনাল ডিগ্রি প্রাপ্তদের মধ্য থেকে প্রতি শিক্ষাবর্ষের একজনকে এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হবে।
এছাড়াও ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর পরবর্তী উৎকৃষ্ট-জনকে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হবে। তবে শর্ত থাকে যে, ওই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ৩.৯৬ হতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসসি (অনার্স/ইঞ্জি.)/বিবিএ/বিএসএস (অনার্স) বিফার্ম প্রফেশনাল ডিগ্রি প্রাপ্তদের মধ্য থেকে প্রতি শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে এই পদকের জন্য মনোনীত করা হবে। একাধিক শিক্ষার্থী একই সিজিপিএ প্রাপ্ত হলে সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হারের ভিত্তিতে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সর্বোকৃষ্ট একজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হবে। যেহেতু প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়, সেহেতু একই শিক্ষার্থীকে পুনরায় ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই-নতুন নীতিমালা অনুযায়ী।
তবে একই শিক্ষাবর্ষের সব অনুষদের প্রতিটি বিভাগের ফল প্রকাশ না হলে ওই শিক্ষাবর্ষের কেউ চূড়ান্ত পদকের জন্য মনোনীত হবে না। অনিয়মিত শিক্ষার্থী যেমন: পুনরায় ভর্তি-কৃত, ‘এফ' গ্রেড প্রাপ্ত, গ্রেড মানোন্নয়নকারী ও অন্যান্য) পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অশালীন/অশোভনীয় আচরণের জন্য যেকোনো ধরনের শাস্তি (এমনকি সতর্কতামূলক নোটিশ) প্রাপ্ত শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে পদক প্রদান নীতিমালা সংশোধন, সহযোজন ও পরিমার্জনের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে বলেও জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এ নীতিমালায়।
এবারের সমাবর্তনে স্নাতকের ১৫ ও স্নাতকোত্তরের ১৮ বিভাগ থেকে চার হাজার ৪৩৩ জন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর মধ্যে স্নাতকের দুই হাজার ৯৫৩ জন ও স্নাতকোত্তরের এক হাজার ৪৮০ জন। এদের মধ্যে তৃতীয় সমাবর্তনে অংশ নিতে এক হাজার ৭২৮ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ সেশনের মাত্র পাঁচ জনকে এবার অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন দুজন ও ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন মাত্র তিনজন।
ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড সংকটের কারণে এবার সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে না। ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত পাঁচ সেশনের ১৫ করে ৭৫ জন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাত্র পাঁচ জনকে এবার অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অ্যাওয়ার্ড কমিয়ে আনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এতে পড়াশোনায় প্রতিযোগিতা কমবে। প্রতি বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড দিলে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকে। অ্যাওয়ার্ড কমিয়ে আনায় প্রতিযোগিতা কমে যেতে পারে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে প্রথম সমাবর্তনে ৫১ জনকে চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় সমাবর্তনে ২১ শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল। অথচ এবারের সমাবর্তনে মাত্র পাঁচ জনকে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। এবার ডিনস অ্যাওয়ার্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত পাঁচ সেশনে ৭৫ শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রতি সেশনের বিভাগ থেকে কৃতি শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ১৫টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা এবং এনিয়ে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের প্রতি যে আগ্রহ তা কমে যাবে।
শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা অ্যাওয়ার্ড পেলে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। এটিকে কেন্দ্র করে এবার সমাবর্তনের আমেজ নেই।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সমাবর্তন রেজিস্ট্রেশন উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মনির মোর্শেদ জানান, অনার্স ও মাস্টার্স মিলে চার হাজার ৪৩৩ জন ডিগ্রি অর্জনকারী রয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৭২৮ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনার্সের পাঁচ সেশনের ১৫ বিভাগ ও মাস্টার্সের ১৮ বিভাগের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে পাঁচ জনকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে।
নীতিমালা অনুযায়ী এবার অনার্সের ১৫ বিভাগ থেকে পাঁচ জনকে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে সমাবর্তন পদক প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও পদক প্রদান নীতিমালা কমিটির সদস্য ড. মো. রোস্তম আলী বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এবার ডিনস অ্যাওয়ার্ড বাতিল করা হয়েছে। ফান্ড সংকটের কারণে অ্যাওয়ার্ড কমানো হয়নি। এটি নীতিমালা অনুযায়ী করা হয়েছে।
আর উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলছেন, নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ জনকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। অ্যাওয়ার্ড মানেই হলো একজনকে সম্মান করা। এছাড়া সার্টিফিকেট সবাই পান। বিশেষ অর্জনের জন্য পদক দেওয়া হয়। বিশেষ অর্জনের নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, সেই নীতিমালায় পাঁচ জন অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন। তবে অ্যাওয়ার্ড কমানো হয়নি বলে দাবি তার।