বহিরাগতদের অভয়ারণ্য পবিপ্রবি, বাড়ছে বিশৃঙ্খলা ঘটছে সংঘর্ষ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বহিরাগতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পুুরো ক্যাম্পাস। এতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিশৃঙ্খলা। এ ছাড়া বহিরাগতদের আনাগোনায় ব্যহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমও। ক্যাম্পাসের এমন পরিস্থিতিতে গেল কয়েকদিনে বেশকিছু বিশৃঙ্খলাসহ পৃথক পৃথক একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোবাকিলায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

চলতি মাসের শুরু থেকে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের বসার জায়গাগুলোতে বহিরাগতরা তারা তাদের ধুমপান ও আড্ডার জায়গায় পরিণত করেছে। মাদকাসক্ত এসব বহিরাগতরা যেকোনো ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এই চিত্র আরো ভয়াবহ হতে শুরু করে। হলগামী ছাত্রীদের ইভটিজিং করতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসে থাকেন বহিরাগতরা। এসব আসরে সেবন করা হয় গাজা ও বিভিন্ন নেশাজাতিয় দ্রব্য। মাঝেমধ্যে এসব বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেন।

‘‘ভার্সিটির ভিতরে নে, ওই জায়গায় মারতে ভালো হইবে’’

শুধু আড্ডা, বিশৃঙ্খলা, মাদক সেবন কিংবা ইভটিজিংয়ের মত ঘটনাতেই ক্ষান্ত নন এসব বহিরাগতরা। গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের দুই গ্রুপের মারামারিতে বিঘ্নিত হয় ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ। এসময় দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিন রাতে আচমকাই ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় আশেপাশে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা এ বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে একটি পক্ষ ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যায়। এসময় দু’জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ‘নাম সর্বস্ব’ বিশ্ববিদ্যালয় পবিপ্রবি

উদ্ধারকৃত হলেন- স্থানীয় লেবুখালীর মো. হামীম হাওলাদারের ছেলে মো. রাজীব হাওলাদার এবং মিরাবাড়ির মো. বেলাল মিয়ার ছেলে মো. সাব্বির।

আহত দুজনকে উদ্ধার করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে নেয়া হয়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু হাজির হন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরেই স্থানীয় একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে রেষারেষি চলছিলো। সর্বশেষ এক পক্ষ অপর পক্ষের দুজনকে ডেকে আনেন। এসময় এদেরকে বলতে শোনা যায় ‘‘ভার্সিটির ভিতরে ল, ওই জায়গায় মারতে ভালো হইবে’’। জিজ্ঞেসাবাদের পর দুজনকে দুমকি থানা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ

গত ২১ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহিরাগতদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত কজনের নেতৃত্বে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন। ক্যাম্পাসে যেসব বহিরাগতরা এসে বিশৃঙ্খলা করেন তারাই এ হামলায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: কবিতা চর্চা ভালো মানুষ গড়ার কারিগর: পবিপ্রবি ভিসি

এ হামলায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নেতৃত্বে ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ হাসান, বিশ্ববিদ্যালয ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মো. মহসিন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাঈম হোসেন। এরা প্রত্যেকেই স্থানীয় উপজেলার বাসিন্দা। এদের সঙ্গে হামলায় স্থানীয় ছাত্রলীগের পদদারী নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাতে (২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার একটি আনন্দ মিছিল বের পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পথসভায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

ওই আনন্দ মিছিলে দুই শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মধ্যে রাব্বি নামে এক শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পদ বঞ্চিত নেতাকর্মী ও ক্যাম্পাসের আশেপাশে স্থানীয় পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে পদ বঞ্চিতরা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হন। এতে ১০ জন আহত হয়। আহতদের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিত মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ১৪৩, ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় তথা বেআইনি জনতাবদ্ধে মারধর করিয়া গুরুতর জখম করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রলীগ ও বহিরাগতদের সমন্বয়ে এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে নিজেদের ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এসব পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপত্তহীনতার কথা উল্লেখ করছেন। প্রকাশ করছেন শঙ্কাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই আশেপাশের মানুষের কাছে সৌন্দর্য উপভোগের যায়গা। কিন্তু পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কাছে এই বহিরাগত এখন এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি করছেন না তারা? এক কথায় বলতে পবিপ্রবি ক্যাম্পাস এখন বহিরাগতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৮ বছর পর নতুন রেজিস্ট্রার পেল পবিপ্রবি

বহিরাগতদের নেতৃত্বে থাকা পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাঈম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে সেদিন যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আপনি সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে দেখবেন, আমরা সেদিন কোনো ধরনের আক্রমনে কিন্তু যাইনি। বরং ভেতরের কেউ যাতে বাইরে না যেতে পারে আবার বাইরের কেউ যাতে করে ভেতরে না আসতে পারে সে চেষ্টা করেছিলাম। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এটি নিয়ে এর বেশিকিছু বলা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, প্রথম কথা হলো, আমরা শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা একতাবদ্ধ হয়ে কমিটি চালাচ্ছি। এখানে প্রতিপক্ষ গ্রুপ বলতে কেউ থাকতে পারে না। শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে। নতুন কমিটির নিয়ে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারামারির প্রশ্নই আসে না।

ক্যাম্পাসে মারামারি ও হতাহতের ঘটনা তাহলে কীভাবে ঘটলো? জানতে চাইল সাগর বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতরা অতির্কিত হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে তারা এমনটা করেছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিন্তু এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা করেছে। আমরাও ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসার পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে সব ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে প্রশাসন ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে। প্রয়োজনে যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিচ্ছে। সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো আমরা এভাবেই মোকাবিলা করেছে। এজন্য সেভাবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। ইতিমধ্যে গত ২১ ডিসেম্বরের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। একটি মামলাও হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রক্টরিয়াল টিম কাজ করে যাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence